ফরিদপুরে নৌকা প্রার্থীর হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আহত ২০
ফরিদপুরের নগরকান্দায় ৬ নম্বর তালমা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়ার কর্মীসভা ও জনসংযোগে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রঞ্জিত কুমার মণ্ডল, স্থানীয় সংসদের এপিএস সফিউদ্দিন ও বিএনপি নেতা ফিরোজ খানসহ বহিরাগত লোকজনের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও চরম ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। হামলায় তিন পুলিশসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়ার ১৭ জন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে।
আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়া নিয়মিত কর্মীসভার অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেলে ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভা চলাকালীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রঞ্জিত কুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল এসে রসুলপুর বাজারে অবস্থান নেয়। এ সময় কামাল হোসেন মিয়ার জনসংযোগ দেখে মিছিলটি স্লোগান দিতে দিতে তাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। স্লোগান দিয়ে কামাল হোসেন মিয়ার কর্মীসভায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলতে থাকে। খবর পেয়ে নগরকান্দা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে ইটের আঘাতে পুলিশের তিন সদস্য গুরুতর আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ কর্মী জাকির হোসেন জানান, মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়ার রসুলপুর বাজারে জনসংযোগ করছিলেন। এক পর্যায়ে বাজারের পূর্বপাশ দিয়ে নৌকার একটি বিশাল মিছিল এসে বাজারের ভেতরে অবস্থান নেয়। এর কিছুক্ষণ পরে মিছিলটি স্লোগান দিতে দিতে কামাল হোসেন মিয়ার জনসংযোগের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং তাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকে। পরে দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হাতাহাতিই পরে সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ২০ জন মানুষ আহত হয়। তবে কামাল হোসেন মিয়ার লোকবল কম থাকায় তাদের অন্তত ১৭ জন মানুষ গুরুতর আহত হোন। হামলার সময় আ.লীগের রঞ্জিত কুমার মণ্ডল ও সংসদের এপিএস সফিউদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছোটভাই অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল হোসেন মিয়া বলেন, ‘এভাবে আধিপত্য চালালে আমরা নির্বাচন করব কিভাবে? তারা (নৌকা) চাচ্ছে আমরা তাদের হামলার ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। কিন্তু ওদের আশা পূরণ হবে না। আমাকে ও আমার সমর্থকদের ওপর যতই হামলা, মারধর করা হোক আমি জীবিত থাকতে নির্বাচন থেকে সরবো না। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা দীর্ঘদিন এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার মা বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। আমার পরিবার আওয়ামী পরিবার। আমি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তারা আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও একাধিকবার হামলা করতেছে। আমার লোকজনকে পিটিয়ে আহত করেছে। এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ করব।’
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রঞ্জিত কুমার মণ্ডলের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না এবং ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম না।’
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।’