বাংলাদেশের কিছু উদ্বেগ সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস ভারতের
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর বৈঠক করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুদেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক আরও জোরদার করার অঙ্গীকার করেন তাঁরা। এ সময় বাংলাদেশের কিছু উদ্বেগ সমাধানে সহযোগিতার আশ্বাস দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈঠকে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য একটি যুগান্তকারী বছর ছিল। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এক বছরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং উভয় দেশই বেশ কয়েকটি যৌথ উদ্যাপনের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বছর উদ্যাপন করেছে। এটি একটি ল্যান্ডমার্ক ঘটনা। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশগুলোর মধ্যে চলমান সহযোগিতা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা উভয় পক্ষের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জয়েন্ট কনসালটেশন কমিশন (জেসিসি) বৈঠকের পরবর্তী রাউন্ড আয়োজনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারস্পরিক সুবিধার জন্য সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো অনুসরণ করার ওপর জোর দেন।
বৈঠকে ড. মোমেন পুনর্ব্যক্ত করেন—ভারত বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। গত কয়েক বছরে, উভয় দেশই বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্মরণ করেন যে, দুই দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মনোভাবের মধ্যে অনেক অসামান্য সমস্যার সমাধান করেছে এবং আশাপ্রকাশ করেছে যে, তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির দ্রুত স্বাক্ষরসহ সমস্ত অমীমাংসিত বিষয়গুলো তাড়াতাড়ি শেষ হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুদেশের মধ্যে শক্তিশালী ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর জোর দেন। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য তিনি ভারতের সমর্থনও চান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করা ভারতের যুদ্ধ প্রবীণ সৈনিকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০০টি বৃত্তির ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়েছিলেন—ভারতীয় ‘প্রতিবেশী প্রথম’ পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মহামারি চলাকালেও বাংলাদেশ ও ভারত চমৎকার সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যখন সমগ্র বিশ্ব স্থবির ছিল। ড. জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে পরিবর্তনশীল আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বিশেষ করে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ এবং ইউক্রেনে সাম্প্রতিক সংঘাতের ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলের বিঘ্নের আলোকে ব্যবসা, বাণিজ্য এবং সংযোগের প্রচারের ওপর জোর দেন। তিনি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ বাংলাদেশের কিছু উদ্বেগের সমাধানে ভারতের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি ভারতের অর্থায়ন করা কিছু প্রকল্পের দ্রুত ও সময়মত সমাপ্তির ওপর জোর দেন এবং সব বিষয়ে বিশেষ করে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।