বান্দরবানে আট হত্যা : আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে ১৫০ পরিবার
আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে দুটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের মধ্যে গোলাগুলিতে বম জনগোষ্ঠীর আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতদের মৃতদেহ নিতে আসেনি নিহতের পরিবারগুলো। ময়নাতদন্তের পর মরদেহগুলো জনগোষ্ঠী বম অ্যাসোসিয়েশনের কাছে হস্তান্তর করছে পুলিশ। এ ঘটনায় হয়েছে মামলাও। তবে, গোলাগুলির পর আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে বম জনগোষ্ঠীর প্রায় দেড়শ পরিবার।
আজ শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী খামতাং পাড়া এলাকায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সঙ্গে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের গোলাগুলি হয় গতকাল শুক্রবার (৭ এপ্রিল)। এতে আটজন মারা গেছে। ময়নাতদন্তের পর বম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লালজার বম মৃতদেহগুলো গ্রহণ করেন ও ধর্মীয় রীতি অনুসারে সৎকারের জন্য রুমায় নিয়ে যান।
নিহতরা হলেন- ভানদু বম (৩৫), সাংখুম বম (৪৫), সানফির থাং বম (২২), বয়ে রেম বম (১৭), জাহিম বম (৪০), লাল লিয়ান নাং বম (৪৪) এবং লালঠা জার বম (২৭)। তবে অজ্ঞাত পরিচয়ের আরেকটি মরদেহ রোয়াংছড়ি উপজেলায় সৎকার করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
দুই সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পাহাড়ে। আতঙ্ক কাটেনি রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। ভয়ে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছে খামতাং পাড়ার খেয়াং জনগোষ্ঠীর দেড় শতাধিক পরিবার। তাদের মধ্যে রোয়াংছড়ি সদর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৯০ পরিবারের ১৭৮ জন। অন্যদিকে, রুমায় আশ্রয় নিয়েছে ৬০ পরিবারের সদস্যরা। আশ্রয় গ্রহণকারীদের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ কাজ করছে। একইসঙ্গে আশ্রিত পরিবারগুলোকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার এবং পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে, বম জনগোষ্ঠীর আট সদস্যকে হত্যার ঘটনায় রোয়াংছড়ি, রুমা এবং থানচি তিনটি উপজেলায় সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন কেএনএ। ঘোষণা না মানলে চলন্ত গাড়ি ব্রাশ ফায়ার করার হুমকিও দিয়েছে সশস্ত্র সংগঠনটি। এ নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকদের মাঝেও।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের স্বজনরা উপস্থিত না থাকায় বম জনগোষ্ঠীর সংগঠনের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা সাতটি লাশ রুমায় নিয়ে গেছে। অন্যটি রোয়াংছড়ি উপজেলায় সৎকার করা হবে। ঘটনার পর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।’
তবে, যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে সন্ত্রাসীদের হুমকির বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।