বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীর মৃত্যু, ফলাফল স্থগিত
খুলনার চালনা পৌরসভার বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আবুল খয়ের খান আজ সোমবার বিকেলে ভোটগ্রহণ চলাকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ফলে সেখানে মেয়র পদের নির্বাচনি ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. আলমগীর।
তবে আবুল খয়ের খানের মৃত্যুতে নির্বাচনি ফলাফল স্থগিত করা হলেও ওই পদে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। এ বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে দুই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে পুনরায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে।
চালনা পৌরসভায় ভোটের বিষয়ে আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা প্রথমে খবর পেয়েছি বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে। আবুল খয়ের খানের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট আব্দুল মান্নান খান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, বিএনপিপ্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সেখানে লেখা ছিল, ৩টা ৩২ মিনিটে তিনি মারা গেছেন। তারপর আমরা হাসপাতাল থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করি। সেখানে লেখা ছিল, ৩টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা গেছেন। দুই স্থানে দুই রকম তথ্য। এটা কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন আগামীকাল যে সিদ্ধান্ত দেবে, তাই হবে।’
ইসি সচিব আরো বলেন, ‘তবে প্রার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় আপাতত মেয়র পদের নির্বাচনি ফলাফল স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনি আইন বলে, ভোটের আগে যদি কোনো প্রার্থী মারা যান, তাহলে ওই পদের নির্বাচনটা বাতিল হয়ে যাবে। নতুন করে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
ইসি সচিবের এই বক্তব্যের পর প্রার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় মেয়র পদের ভোট বাতিল হয়ে যাবে কিনা জানতে চেয়ে দুজন নির্বাচন কমিশনারের (ইসি) সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাঁরা দুজনই একই কথা বলেন। তাঁদের ভেতরে ইসি রফিকুল ইসলাম খুলনার ওই নির্বাচনের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে, ‘ভোট গ্রহণের আগে যদি কোনো প্রার্থী মারা যান, তাহলে ওই নির্বাচন স্থগিত করার কথা আইনে বলা আছে। কিন্তু এখানে তো ওই প্রার্থী একটি হলেও ভোট পেয়েছেন। তার মানে, ভোট শুরুর পর তিনি মারা গেছেন। সুতরাং এখানে নির্বাচন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আমার মনে হয়। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। বাকি সিদ্ধান্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা নিবেন। এ ছাড়া আদালত যদি কোনো নির্দেশনা দেন, সেক্ষেত্রে সেটা আলাদা বিষয়।’
এর আগে আজ দুপুরে ভোটে অনিয়ম ও ভোটচুরির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে চালনা পৌরসভা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন আবুল খয়ের খানের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আব্দুল মান্নান খান।
গত ২৩ ডিসেম্বর আবুল খয়ের খান করোনায় আক্রান্ত হলে প্রথমে তাঁকে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ২৫ ডিসেম্বর তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি আজ বিকেলে নির্বাচন চলাকালীন অর্থাৎ ৩টা ৩২ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
চালনা পৌরসভায় বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আবুল খয়ের খান ছাড়া অন্য তিন মেয়র পদপ্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের সনৎ কুমার বিশ্বাস, স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল ও গৌতম কুমার রায়। ভোটগ্রহণ শেষে এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে এগিয়ে আছেন বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
২০০৪ সালের নভেম্বরে চালনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে বিএনপির মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মো. আবুল খয়ের খান পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের নির্বাচনে অচিন্ত্য কুমার মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন বর্তমান মেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস। ২০১৫ সালের নির্বাচনে সনৎ বিশ্বাস আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হন।
চালনা পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ১০০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ হাজার ৮৬৩ ও নারী ভোটার ছয় হাজার ২৩৭ জন।