বিজয়ের সাজে রাজধানী
দৃষ্টিনন্দন আলো। নাম স্কাই ব্রেকার। আলোটি কখনো ওপরে উঠছে। কখনো-বা নিচে নামছে। এর ফাঁকে স্কাই ব্রেকার উৎসুক মানুষের দৃষ্টি কাড়ছে।
দৃষ্টির নজর যখন সংসদ ভবনে, তখন চোখ আটকে যাবে লাল-সবুজের ঝিলমিল করে জ্বলে ওঠা আলোতে। পুরো জাতীয় সংসদ ভবন ঘিরে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এই দৃশ্য আজ মঙ্গলবার রাতের।
এই দৃশ্য ধারণে ব্যস্ত অনেকেই। কেউ সেলফি তুলছেন। কেউ তুলছেন সংসদ ভবনের ঝিকমিক করা দৃশ্যের। ছবি তুলে কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও করছেন। এই যেমন সাবরিন ডেইজি ফেসবুকে সংসদ ভবনের একটি ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘বিজয়ী শুভেচ্ছা’।
কিশোর নাফিজ রহমান গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছে দুই দিন হলো। এর মধ্যে গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে সে। অস্থিরতা কাটাতে তার বড় বোন সাবরিন ডেইজি তাকে নিয়ে ঘুরতে আসে সংসদ ভবনের সামনে। সংসদ ভবনের প্রাঙ্গণ দেখেই নাফিজ বলে উঠল, ‘আপা, এ যে বিশাল সুন্দর। চলো, ছবি তুলি।’
টানা কয়েকটি ছবি তুলে নাফিজ রহমান গিয়ে দাঁড়ায় গানের আসরের পাশে। সংসদ ভবনের পাশে কয়েকজন বন্ধু মিলে সংগীতশিল্পী জেমসের ‘বাংলাদেশ’ গানটি গেয়ে চলেছে। তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চলেছেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরো কয়েকজন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনও ছবি তুলছেন সংসদ ভবনের, ছবি তুলছেন নিজের। সংসদ ভবনের এই সাজানো গোছানো দৃশ্য দেখতে অনেকেই ভিড় জমান সেখানে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও সতর্ক দৃষ্টি ছিল পুরো এলাকা জুড়ে।
এ তো গেল শুধু সংসদ ভবন এলাকার দৃশ্য। একইভাবে বিজয় দিবস উপলক্ষে পুরো রাজধানী আজ সেজে ওঠে লাল-সবুজের বিজয়ী সাজে। যেন অপেক্ষা শুধু ১৬ ডিসেম্বরের। বাকি সব আয়োজন সম্পন্ন।
ঘুরতে ঘুরতে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, পুরো চত্বরই সেজে বসে আছে। চত্বরের পানির ফোয়ারার সঙ্গে বিভিন্ন রঙের আলো মিশে এক অদ্ভুত সুন্দর আবহের জন্ম নিয়েছে।
মতিঝিলের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে কয়েকটি ভবনে চোখ পড়ে। সেসব ভবনের চারপাশ জুড়ে নানা ধরনের আলো ঝিলমিল করে জ্বলছিল। ঝিকিমিকি আলোর মাঝে বসানো হয়েছে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।
শহুরে রাস্তার মোড়গুলো আজ সেজে ওঠে এক রঙিন সাজে। বিক্রেতা পতাকা বিক্রি করছেন, ক্রেতা তা কিনছেন।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উৎসবমুখর এক পরিবেশ। রাজু ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিক্রেতা পতাকা বিক্রি করতে করতে জানালেন, বিজয়ের মাস এলেই পতাকা বিক্রি করতে ভালো লাগে তাঁর। আয়ও বাড়ে। সে সময় টিএসসিতে চলছিল বিজয়ী কনসার্ট। আনন্দ আর উৎসবে মেতে ওঠে সেখানকার মানুষ।
পুরো শহরে আজ মুক্তির সাজ। এর মধ্যে এই মুক্তি অর্জনে যাঁরা প্রাণ দিলেন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে পুরো শহরজুড়ে বেজে চলেছে দেশাত্ববোধক নানা গান।