ভুয়া পরোয়ানা ও মামলাকারীকে খুঁজে বের করতে পিবিআইকে নির্দেশ
সাভারের আজিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়া পরোয়ানা ও মামলাকারীকে খুঁজে বের করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ভুয়া পরোয়ানায় ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজকে ৮০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
ভুক্তভোগী আবদুল আজিজের করা রিটের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি জাফর আহমেদ ও কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ ইউনুস আলী রবি।
রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও বিশেষ শাখার প্রধান (অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপমহাপরিদর্শক, পুলিশের গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার, ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার, মাদারীপুর, জামালপুর ও গাজীপুরের পুলিশ সুপার, জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে আইনজীবী সৈয়দ ইউনুস আলী রবি বলেন, ‘গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার একটি মাদক মামলায় সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের ফিরিঙ্গীকান্দা গ্রামের গেদু মিয়ার ছেলে কৃষক আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠায়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে একে একে আরও ৮টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় আজিজুর রহমান ১০০ দিন জেল খাটেন।’
আইনজীবী জানান, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় ২০১৭ সালের ২০ মার্চ আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় ২০১৮ সালের ৬ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করে সাভার থানা পুলিশ। পরে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে। শুনানি শেষে আদালত তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান।
কয়েকদিন সেখানে থাকার পর আবদুল আজিজকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর তিন দিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে। এভাবে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১০০ দিন কারাভোগ করার পর ২০১৮ সালের ১৩ মে তার জামিন হয়। পরে ১২ জুন তিনি মুক্তি পান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ জয়দেবপুর থানার পূবাইল তালুটিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৪০০টি ইয়াবাসহ রিপা ও আমেনা নামের দুই মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আজিজসহ নয় জন পালিয়ে যান। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে। শুনানি শেষে আদালত তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
কয়েকদিন সেখানে থাকার পর তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর তিন দিন পর সেখান থেকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে।
কাশিমপুর কারগারে থাকা অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি ও চান্দগাঁও থানার চারটি মামলায়, রাজধানীর মিরপুর থানার দুটি মামলায়, জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার একটি মামলায় ও মাদারীপুর সদর থানার একটি মামলায় পরোয়ানার মাধ্যমে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এসব মামলায় তাকে চট্টগ্রাম কারাগার, মাদারীপুর কারাগার ও জামালপুর কারাগারে থাকতে হয়। সর্বশেষ তিনি কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক বিলকিছ আক্তার গত বছর ২৯ মে এক আদেশে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার মামলায় আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজ নামে কোনো আসামি নেই। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজিজুরের অন্তর্বর্তীকালীন হাজতি পরোয়ানার ফটোকপিতে শুধু দায়রা নম্বর ছাড়া আর কোনো কিছুর মিল নেই এবং আদালত (চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ তৃতীয় আদালত) থেকে তার নামে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়নি।’ অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকলে তাকে (আবদুল আজিজ) মুক্তির নির্দেশ দেন আদালত।
একইভাবে মাদারীপুর মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালত গত বছরের ৩১ মে এক আদেশে বলেন, ‘আবদুল আজিজকে (আজিজুর রহমান) হয়রানির জন্য বিচারক ও আদালতের সিল-স্বাক্ষর জাল করে মাদারীপুর সদর থানার একটি মামলায় তার নামে হাজতি পরোয়ানাসহ এক পাতার আদেশনামা তৈরি করা হয়েছে। আদালতে উপস্থাপন করা ওই আদেশনামায় অনেক অসংগতি আছে বলে আদালত উল্লেখ করেন।’