ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ভূমির অপ্রতুলতার কথা মাথায় রেখে সরকার প্রথমবারের মতো অকৃষি জমিতেও সিলিংয়ের (সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের) বিধান করেছে। প্রাথমিকভাবে ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনে সিলিং ৪০ বিঘা প্রস্তাব করা হয়েছে।’ 

আজ বৃস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কার্য অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে ভূমিমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট আজকের কার্য অধিবেশনে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দীক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল বারিকসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তরগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনে এমন বিধানও রাখা হবে যেন বৃহৎ শিল্প স্থাপনে অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমা কোনো বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ আবেদনে সরকার অকৃষি জমির ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত শিল্প স্থাপনে অনুমোদন দিতে পারবে। অন্যদিকে, কৃষিজমি সুরক্ষা, অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমার বিধান, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসের উদ্দেশে করা ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনের খসড়াও আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।’

ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দলিলাদি যার, জমি তার—এই ভাবনা থেকেই ভূমি অপরাধ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কেউ যত বছরই জোর করে কোনো জমি দখল করে রাখুক না কেন, যথাযথ দলিলাদি ছাড়া বে-আইনি দখলদারের মালিকানা এই আইনে কখনই স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। আইন প্রণয়নের পর জমি দখল সংক্রান্ত হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। দলিলাদি বলতে যথাযথ নিবন্ধন দলিল, খতিয়ানসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্র। কৃষি জমির সিলিং ৬০ বিঘা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরীক্ষণের পর এই দুই আইনের খসড়া আইন প্রণয়নের জন্য সংসদে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে সারা দেশে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থা চালু করা হবে। এরপর থেকে আর সরাসরি এলডি ট্যাক্স গ্রহণ করা হবে না। ইতোমধ্যে ক্যাশলেস ই-নামজারি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা. যা তাৎক্ষণিকভাবে অটোমেটেড চালান সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।’ 

মন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি ভবনে একটি নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ে এ সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। জেলাভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকদের ভূমিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং এজন্য প্রাইভেট এজেন্টশিপ নীতিমালা করা হচ্ছে। কলসেন্টার ছাড়াও এসব সেবাকেন্দ্রে নাগরিকরা সরাসরি গিয়ে ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া, প্রাইভেট এজেন্ট কার্যক্রম মনিটরের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং উপজেলা ও জেলাভিত্তিক নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে।’