ভৈরবে বিএডিসির গুদামে সার আনা-নেওয়ায় দুর্ভোগ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মেঘনা নদীর তীরঘেঁষা রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় বিএডিসি গুদামে সার আনা-নেওয়া করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অপরদিকে ডিলারদের সার পরিবহণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় এবং কৃষক পর্যায়ে সঠিক সময়ে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
নদীর পাড়ের রাস্তার মাঝখানে যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের অফিস নির্মাণ করায় রাস্তাটি সরু হয়ে পরিবহণ ও চলাচলে এই প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। সমস্যাটি সমাধানে বিএডিসি ও পৌর কর্তৃপক্ষ রেলওয়েকে পত্র দিয়ে অনুরোধ করেছে ইতোমধ্যে।
জানা যায়, ভৈরবের মেঘনা নদীর পাড়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপো অফিস ও বিএডিসির সার গুদাম অবস্থিত। যমুনা অয়েল কোম্পানি বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে জায়গা লিজ নিয়ে ভৈরবে অপরিকল্পিতভাবে ডিপো নির্মাণ করে। ডিপো নির্মাণের সময় তারা ডিপো ও সার গুদামে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির মাঝখানে তাদের অফিস নির্মাণ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়। অথচ ডিপোর ভেতরে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা প্রচুর খালি জায়গা পড়ে আছে। যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপোর পরেই একই বাউন্ডারির ভেতরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের অফিস ও বিএডিসির সার গুদাম।
বিদেশ থেকে আমদানি করা নন-ইউরিয়া সার চট্টগ্রাম থেকে এই গুদামে ট্রাক দিয়ে আনা হয়। পরে ভৈরবসহ কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, নরসিংদী জেলায় সরবরাহ করা হয়।
গুদামের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় আমদানি করা সার ট্রাকে করে গুদামের কাছে আনা যাচ্ছে না। গুদাম থেকে এক হাজার ফুট দূরে সারের ট্রাক রেখে লেবার দিয়ে গুদামে আনতে হচ্ছে। এতে সময় অপচয়সহ লোড আনলোডিংয়ে লেবার খরচ বেশি লাগছে। লেবার খরচ বৃদ্ধিতে ডিলারদের পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যায়। অন্যদিকে গুদাম থেকে সার ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে সময় মতো সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।
এ ছাড়া পৌর এলাকার একাংশসহ উপজেলার ৩০ গ্রামের মানুষ নদীর পাড়ের এই রাস্তা দিয়ে ভৈরব নদীবন্দরে যাতায়াত করে থাকে। রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওইসব এলাকার লোকজন পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।
ভৈরব বিএডিসি সার গুদামের সহকারী পরিচালক (সার) শিপন চন্দ্র সরকার জানান, যমুনা অয়েল কোম্পানি কর্তৃপক্ষ রেলওয়ে থেকে জায়গা লিজ নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে তাদের অফিসটি রাস্তার উপর নির্মাণ করেছে। পেছন দিকে তাদের প্রচুর জায়গা খালি পড়ে আছে। ৩০ ফুট জায়গা খালি করে দিলে বন্ধ রাস্তাটি খুলে যায়। ট্রাকে সার গুদামের কাছে পৌঁছালে লোডিং আনলোডিং সুবিধা হবে। সার জরুরি পণ্য। কৃষিপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সারের সম্পর্ক। তাই কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সার সরবরাহের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে রাস্তাটি খুলে দেওয়ার দাবি এই কর্মকর্তার।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিটের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও হাওরের সার ডিলার আল-আমিন সৈকত বলেন, ভৈরব বিএডিসি গুদাম থেকে আমরা সময়মতো সার সরবরাহ না পেয়ে এলাকায় পৌঁছাতে বিলম্ব হয় এবং পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রি করতে হচ্ছে।
ভৈরব পৌরসভার মেয়র আলহাজ ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন, আমি রেলওয়ের ও যমুনা অয়েল কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি, জনস্বার্থে যমুনার ডিপো অফিসটি ৩০ ফুট পেছনে সরিয়ে নিতে। রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় এলাকাবাসীসহ সার লোডিং আনলোডিংয়ে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
যমুনা অয়েল কোম্পানি ভৈরব ডিপোর সুপারিনটেনডেন্ট মো. মতিউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে অফিস রুমটি স্থানান্তর করে পেছনে নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগের এস্টেট অফিসার মো. শফিউল্লাহ বলেন, বিএডিসি ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দুটি চিঠি আমি পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমি নিজে জায়গাটি পরিদর্শন করে সমস্যাটি দেখেছি। যমুনা অয়েল কোম্পানির জায়গাটি রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার অফিস থেকে লিজ দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাটি সমাধানে চেষ্টা করব।