ভৈরবে রেলপথের দুধারে তারুণ্যের বনায়ন
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার রেলপথের দুইপাশে গাছের চারা রোপন করেছে একদল তরুণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেশি-প্রবাসী, বন্ধু, প্রতিবেশী, স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া টাকায় এই বনায়নের কাজটি করেছেন তাঁরা।
তরুণরা স্বপ্ন দেখছেন, রোপন করা চারাগুলো যখন বৃক্ষে পরিণত হবে, ফুল-পাতায় মনোরম সুন্দর দৃশ্য সৃষ্টি করবে। সেই মুগ্ধতা ভৈরবকে দেশব্যাপী আলাদা একটা পরিচিতি দেবে। এলাকাবাসীকে দেবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন।
দেশের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথ। এই রেলপথের প্রসিদ্ধ জংশন ভৈরব। মেঘনা নদীর উপর ব্রিটিশদের তৈরি দেশের দ্বিতীয় রেলসেতুটির অবস্থান এই পথে। যা স্বাধীনতার পর নাম হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হালিম সেতু। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়। এতে ভৈরবের মেঘনা নদীর উপর আরও একটি রেলসেতু তৈরি করা হয়। যার নাম রাখা হয় ‘রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রেলওয়ে সেতু’।
এই সেতুর দুইপাশ ছিল আগাছায় পরিপূর্ণ। ছিল না কোনো গাছ। সেই পতিত রেলপথে বনায়ণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় তরুণরা। তাঁরা রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান রেলসেতু থেকে শুরু করে ব্রক্ষপুত্র রেলসেতু পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার রেলপথ বনায়ন শুরু করে। রেলপথের দুই পাশে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ কৃষ্ণচূড়া, শিমূল ও কদমের চারা রোপন করবে তাঁরা। ইতোমধ্যে ৪০০ কৃষ্ণচূড়ার চারা রোপন করা হয়েছে। এখন চলছে সেসব চারায় বাঁশ-বেত এবং জাল দিয়ে বেড়া দেওয়ার কাজ।
বনায়ণের অন্যতম উদ্যোক্তা আল আমিন, আরাফাত ও রিয়াজ জানান, এই বনায়ণে তারা পাঁচ লাখ টাকার প্রাথমিক বাজেট তৈরি করেছেন। এই বাজেট সংগ্রহে প্রথমে তাঁরা নিজেরা টাকা দেয়। পরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অর্থ সহায়তা চায়। এতে অনেকেই সাড়া দেন। অনেকেই সাধ্য অনুযায়ী অর্থ সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। অনেকেই আবার শ্রম দিয়ে তাদের উৎসাহিত করছেন।
শাখা-প্রশাখা প্রসারিত ও ফুলের সৌন্দর্য এবং দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এসব গাছের সম্পৃক্ততা থাকায়, এই জাতের গাছ রোপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান এ কাজের উদ্যোক্তা আশিক, রিদম, রাহিদ, শাওন ও সাইম। গাছগুলো তারাই পরিচর্যা করবেন বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। তাঁরা আহ্বান জানান, স্থানীয় লোকজন যেন এই বনায়ণ রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও) লুবনা ফারজানা তরুণদের এই বনায়ণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তিনিও কিছু গাছের চারা দিয়ে নিজেকে এই মহতী কাজে শরিক করেছেন। এ বনায়ণ কর্মসূচির ফলে এই এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ বিশুদ্ধ বাতাসের ঘাটতি পূরণ করবে। তাদের মতো করে উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের তরুণরা এমনি উদ্যোগ নিলে জাতীয় বৃক্ষরোপন কর্মসূচি সফল হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।