মওদুদ আহমদ অবশ্যই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন : মির্জা ফখরুল
রাজনীতির ইতিহাসে মওদুদ আহমদ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে, রাজনীতিবিদ হিসেবে এবং সর্বোপরি একজন লেখক ও গবেষক হিসেবে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অবশ্যই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি জীবিত থাকবেন তাঁর এলাকার মানুষের কাছে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে, বিএনপির কাছে, আমাদের রাজনীতির ইতিহাসে, আন্দোলনের ইতিহাসে।’
আজ রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের স্মরণে এক ভার্চুয়াল স্মরণসভায় বিএনপির মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে গত ১৬ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। গত ১ ফেব্রুয়ারি তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান।
মওদুদ আহমদের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর আগে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। অষ্টম জাতীয় সংসদে আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন এই রাজনীতিবিদ।
মওদুদ আহমদ স্মরণে সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মওদুদ আহমদ আজীবন অর্থাৎ ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় যে জিনিসটা আমার কাছে মনে হয়েছে, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি করেছেন তিনি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বলতে, অত্যন্ত পরিশীলিত ভাষায় পরিমিত বক্তব্য দেওয়া ছিল তাঁর প্রধান গুণ। আমরা তাঁর অতীত থেকে শুরু করে শেষ জীবন পর্যন্ত দেখেছি তাঁর সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা- এটা ছিল তাঁর বড় রকমের একটা গুণ। শেষ সময়টায় আমার তাঁর খুব কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়েছিল। আমি তাঁর কাছে ব্যক্তিগতভাবে ঋণী বিভিন্ন পরামর্শের জন্য। তিনি আমার কাছে একজন অভিভাবক ছিলেন।’
সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে শেষ সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে যখন তিনি এভার কেয়ার হাসপাতালে ছিলেন সেই সময়ে আমি ও ডা. জাহিদ (এ জেড এম জাহিদ হোসেন) তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে তিনি তখন নাকের মধ্যে মাস্ক নিয়েই আমাকে বলেছিলেন, ‘এবার স্ট্যাডিং কমিটির মিটিংয়ে আমি থাকতে পারব না। ইনশাল্লাহ পরের শনিবারে থাকব।’ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পরের মিটিংয়ে আর উপস্থিত হতে পারেননি। সিঙ্গাপুর থেকে তিনি আর ফিরে আসেননি। তিনি আর কোনোদিনই আমাদের সঙ্গে থাকবেন না। তিনি থাকবেন আমাদের হৃদয়ে, আমাদের অন্তরে।’
মওদুদ আহমদ স্মরণে ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপিনেতা বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্য্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবু হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সহধর্মিনী হাসনা মওদুদ বক্তব্য দেন।