মামলা আর এগোবে না, আশা হেফাজতের
ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ এনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমিরসহ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো তদন্তের পর আর এগোবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির নেতারা।
এসব মামলাকে ‘ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের স্পষ্ট আলামত’ উল্লেখ করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বলেছে, ‘হেফাজতের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে। আশা করি, তাদের তদন্তের পর মামলা আর এগোবে না। সরকারও মামলা নিয়ে আর সামনের দিকে এগোবে না বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
‘বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার জন্য এরই মধ্যে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খুব শিগগিরই বৈঠক হবে। সেখানে আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করছি’, যোগ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের ইসলামের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা নূরুল ইসলাম। এ সময় হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ নভেম্বর খেলাফত মজলিসের নেতা ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য তৈরির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলবেন।
এরপর ২৭ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক মাহফিলে বলেন, কোনো ভাস্কর্য তৈরি হলে তা টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে।
এ ধরনের অভিযোগ এনে গত ৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে আবেদন করেন।
এর পরের দিন ৭ ডিসেম্বর একই অভিযোগ এনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল হেফাজতের এই তিন নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদারের আদালতে এই মামলা করা হয়।
একই সময়ে মাওলানা মামুনুল হককে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি আবদুল মালেক ওরফে মশিউর মালেক। একই বাদী আজ বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে এসব মামলার কথা উল্লেখ করে ‘সেক্যুলারের নামে ইসলাম বিদ্বেষীদের সরকার নিয়ন্ত্রণ না করলে ধর্মপ্রাণ মানুষ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন হেফাজতের ইসলামের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও জননেত্রী পরিষদ নামে দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হেফাজতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আর্জিতে মদিনা সনদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, যা এক ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের স্পষ্ট আলামত। যা শুধু হেফাজতে ইসলাম ও এর আমির পর্যন্তই সীমাবদ্ধ বলে আমরা মনে করি না, বরং এটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে। এ জন্য আমরা এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ভাস্কর্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই গত ৬ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে দুজন স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও দুজন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক। পুলিশের দাবি, ভিডিও ফুটেজে যে দুজনকে দেখা গেছে, তারা মাদ্রাসার ছাত্র।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে আজ হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছে।’
‘হেফাজতে ইসলাম এভাবে নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়া কিংবা গোপন তৎপরতার পথ অনুসরণ ও অনুমোদন করে না। এটা জানার পরও সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সমর্থকদের মধ্যকার ইসলাম বিদ্বেষী একটি মহল কুষ্টিয়ার ঘটনার দায় ওলামায়ে কেরাম ও হেফাজত নেতাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা করছে’, যোগ করা হয় হেফাজতে ইসলামের লিখিত বক্তব্যে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের নেতা মাওলানা আবুল কালাম, মধুপুরের পীর আব্দুল হামিদ, মাওলানা মাহফুজুল হক, ড. আহমদ আব্দুল কাদের, অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ।