মেট্রোরেলের চলা দেখে তাদের উঠতে ইচ্ছে করছে
তখনও সকাল ১০টা বাজেনি। মেট্রোরেলের মূল ওয়ার্কশপের পাশে এ প্রকল্পের পাঁচজন কর্মী দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। পাঁচজনে মিলে একটি ছবিও তুললেন। ছবির মধ্যে মেট্রোরেলকেও রেখেছিলেন তারা। স্থান রাজধানীর দিয়াবাড়ী।
পাঁচজনের মধ্যে কাওসার আহমেদ নামের এক যুবক কথার ছলে তাদের বলছিলেন, ‘অনেকদিন ধরে মেট্রোরেলের জন্য কাজ করছি। স্টেশন তৈরি করলাম। লাইন (ট্রেন চলার পাত) তৈরি করলাম। সেই স্টেশন একটু পরেই ট্রেন চলবে। কবে যে আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল শুরু করবে! শুরুর দিনই ট্রেনে উঠতে হবে। আর তর সইছে না।’
কাওসারের এই কথা শুনে পাশে থাকা রাকিব নামের আরেক কর্মী বলে উঠলেন, ‘হবে, চলা যখন শুরুই হয়েছে; আমরা অবশ্যই উঠব। যদি বেঁচে থাকি আগামী বছর পর্যন্ত। যে ট্রেন চালানোর জন্য আমরা সবকিছু করছি, সে ট্রেনে না উঠলে চলবে?’
সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকা নাজমুল হোসেন নামের একজন উত্তরে বললেন, ‘বেঁচেও থাকব, ট্রেনেও উঠব। শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।’
এই প্রতিবেদক সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁদের কথা শুনছিলেন। টিঅ্যান্ডটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্মী নাজমুলের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, আপনি কতদিন ধরে কাজ করছেন এখানে? নাজমুল বলছিলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে এখানে কাজ করছি। এই প্রকল্পের প্রতি আমার অনেক মায়া। যত্ন নিয়ে কাজ করি নিয়মিত। যেদিন ট্রেনে উঠতে পারব, সেদিন আমার খুব ভালো লাগবে।’
এই প্রকল্পের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী শরিফ চৌধুরী (ছদ্মনাম)। তিনি বলছিলেন, ‘স্বপ্নের মেট্রোরেল এখন বাস্তব। সবাই সেটা দেখে খুবই আনন্দিত। আমরাও আনন্দিত কিন্তু ছুঁয়ে দেখার বা এটাতে চড়ে দেখার বাসনা হয়তো মিটবে, যখন সবাই এটাতে উঠবে। এতটা সময় ধরে দিন রাত এক করে আমরা কাজ করছি এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করেছি। এখানে ছোট বড় সব মিলিয়ে ৫৩টা বিল্ডিং আছে। আমরা এই বিল্ডিং থেকে ওই বিল্ডিংয়ে দৌড়ে দৌড়ে কাজ করছি। কিন্তু আজকের এই দিনে আমরাই বঞ্চিত ছিলাম, উদ্বোধনের সময়ে ওখানে থাকাটাও নিষেধ ছিল কর্তৃপক্ষের।’
পরীক্ষামূলকভাবে ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে এই মেট্রোরেলে (ট্রেন) চলাচলের উদ্বোধন করা হয়েছে আজ রোববার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে। চালক ছিলেন একজন জাপানি নাগরিক। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এটি উদ্বোধন করেন।
মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত ডিপো থেকে ট্রেনটি চলাচল শুরু করে। উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রীবিহীন ট্রেনটি চলছে। সে সময় সেখানে সাংবাদিক ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যেও এই ট্রেন চলাচল নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। এক সাংবাদিক বলেই বসলেন, ‘আহ, দেখেই শান্তি লাগছে। কবে যে চড়তে পারব!’
মেট্রোরেলের প্রজেক্ট ম্যানেজার আরিফুর রহমান আজ রোববার সকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ট্রেনটি আনুষ্ঠানিকভাবে ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে পরীক্ষণের জন্য চলাচল করবে৷ চালক থাকবেন একজন জাপানি। তবে, নিরাপত্তার স্বার্থে এখনি তার নাম বলছি না আমরা। যাত্রা শুরু করলেও কোনো যাত্রী ট্রেনে থাকবেন না। ট্রেনটি বিদ্যুতের মাধ্যমে চলবে। চলতে চলতে যদি কখনও বিদ্যুৎ চলে যায়, তাহলেও কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, এই ট্রেনটির নিজস্ব বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা থাকবে। ট্রেনটি ব্রেক করলে ওই বিদ্যুৎ তৈরি হবে।’
আরিফুর রহমান আরও বলেন, ‘স্বপ্নের মেট্রোরেলের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত, তারা সবাই আজ উচ্ছ্বসিত। মেট্রোরেলের কাজের শুরু থেকেই যারা আছেন, তারা সবাই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন। তারা সবাই এই ট্রেনে উঠার অপেক্ষায় আছে।’