যশোরের হুঁশতলায় শায়িত সাংবাদিক সোহানা তুলি
সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলির (৩৮) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। যশোর সদরের বকচর হুঁশতলা কবরস্থানে আজ বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সাংবাদিক, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুমহল ও প্রতিবেশীরা অংশ নেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর রায়েরবাজার মিতালি রোডের একটি বাসা থেকে তুলির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেসময় পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে জানায়। যদিও ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানানো হয়।
তুলির পরিবারসূত্রে জানা যায়, গতকাল তুলির মরদেহ উদ্ধারের পর সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। এরপর আজ বেলা আড়াইটার দিকে সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যশোরের উদ্দেশে রওনা হন তুলির স্বজনরা। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় মরদেহ বহনকারী গাড়িটি যশোরের বাসভবনে পৌঁছে। এরপর এলাকার একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে তাঁকে হুঁশতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
গতকাল বুধবার তুলির মরদেহ উদ্ধারের পর হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে সোহানা পারভীনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনগত রাত থেকে বুধবার বিকেলের মধ্যে যেকোনো সময় ঘটনাটি ঘটতে পারে।’
মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘হাজারীবাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল রায়ের বাজারের শেরেবাংলা নগর রোডের একটি ভাড়া বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে সাংবাদিক সোহানার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমার ধারণা, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’
এমন ধারণার কারণ কী, জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘জানা গেছে, তিনি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর গলায় যেখানে দাগ থাকার কথা, আমরাও সেখানে দাগ পেয়েছি। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত সংগ্রহ করেছে। তাদেরও দাবি, এটি আত্মহত্যা হয়ে থাকতে পারে। এর বাইরে কিছু ঘটে থাকলে ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’
এদিকে, সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলির অস্বাভাবিক মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) সভাপতি মামুন ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয়।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ‘রাজধানীর হাজারীবাগের একটি বাসা থেকে বুধবার সোহানা পারভীন তুলির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা আপাতত আত্মহত্যা মনে হলেও এর পেছনের রহস্য এখনও জানা সম্ভব হয়নি।’
বিবৃতিতে বলা হয়— সাংবাদিক তুলি কর্মনিষ্ঠ, প্রাণোচ্ছ্বল ও মেধাবী একজন সংবাদকর্মী ছিলেন। আমরা মনে করি, তার এই মর্মান্তিক মৃত্যু সংবাদজগতের একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এ রকম প্রাণোচ্ছ্বল একজন সংবাদকর্মী আত্মহত্যা করতে পারেন— তা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য। এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে।
বিবৃতিতে ডিএসইসির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এরইমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের প্রতি আস্থা রাখতে চাই যে, অচিরেই এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আমরা জানতে পারব। এর পেছনে কেউ প্ররোচনাকারী থাকলে তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা গেলে তা সাংবাদিক সমাজের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে।’
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন সোহানা তুলি। তিনি দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনি ২০২১ সালের মে পর্যন্ত বাংলা ট্রিবিউনে কর্মরত ছিলেন। এরপর কিছুদিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। সম্প্রতি একটি অনলাইন শপ খুলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তুলি।