সোহানা তুলির মৃত্যুর ঘটনায় সাংবাদিক রঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদ
সাংবাদিক সোহানা পারভীন তুলির অপমৃত্যুর ঘটনায় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আধা ঘণ্টার ওপরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাসুম এনটিভি অনলাইনকে তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের ধানমডিণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, তুলির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় একটি ইউডি (আনন্যাচারাল ডেথ) মামলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এরইমধ্যে এই ঘটনায় সাংবাদিক রফিকুলকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমরা সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখছি।
জানা গেছে, ওই বাসার দারোয়ানের দেওয়া একটি মোটরসাইকেলের নম্বরের সূত্র ধরে রফিকুল ইসলাম রঞ্জুকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে ঢাকা না ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে মাসুম বলেন, ‘এমন কিছু অভিযোগ আমরাও জানতে পেরেছি। ফলে, তাঁকে আমরা তদন্তের স্বার্থে ডেকেছিলাম। তদন্তের স্বার্থে তাঁর সঙ্গে কথা বলা দরকার বলে আমাদের মনে হয়েছিল। তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের কাছে থাকা তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্যই মূলত তাঁর সঙ্গে কথা বলা। কথা বলা শেষে তিনি চলেও গেছেন।’
মাসুম আরও বলেন, ‘বোধহয় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট তিনি (রঞ্জু) আমাদের কাছে ছিলেন। আমরা মূলত নিহত ওই সাংবাদিকের সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাব৷’
একটি সূত্র বলছে, নিরাপত্তাকর্মীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাজারীবাগ থানা পুলিশ তুলির বন্ধুকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। একটি মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটের সূত্র ধরে জানা যায়, মোটরসাইকেলটির মালিক রফিকুল ইসলাম রঞ্জু নামে এক সাংবাদিক। তিনি একটি দৈনিক পত্রিকায় যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পরে ওই পত্রিকার প্রশাসন বিভাগের মাধ্যমে তাঁকে ধানমণ্ডি থানার তৃতীয় তলায় জোনাল এসি আব্দুল্লাহ আল মাসুমের কার্যালয়ে ডাকা হয়। দুপুরে রঞ্জু ধানমণ্ডি থানার তৃতীয় তলায় গেলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
গতকাল বুধবার দুপুরে রায়েরবাজারের মিতালী রোডের বাসা থেকে সোহানা পারভীন তুলির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তুলিকে ফোনে না পেয়ে তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নন্দিতা বাসায় গিয়ে দরজায় নক করেন। কিন্তু, ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে দারোয়ানের সহযোগিতায় দরজা ভেঙে তুলিকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখতে পান। পরে তিনি বিষয়টি হাজারীবাগ থানাকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তুলির মরদেহ উদ্ধার করে।
এসময় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের পর সন্ধ্যায় তুলির মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সেখান থেকে আজ দুপুর আড়াইটার দিকে মরদেহ যশোর উদ্দেশে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় যশোরে পৌঁছালে মাগরিবের নামাজের পর যশোরের বকচর হুঁশতলা মসজিদের পাশে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন সোহানা তুলি। তিনি দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক কালের কণ্ঠে কাজ করছেন। ২০২১ সালের মে মাসে তিনি বাংলা ট্রিবিউনের চাকরি ছাড়েন। এরপর কিছুদিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন সোহানা তুলি। সম্প্রতি একটি অনলাইন শপ খুলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি।