যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীদের ৭ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯-এর নতুন ধরন দেখা দেওয়ায় সেখান থেকে ফেরত যাত্রীদের দেশে প্রবেশের পর সাত দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সাত দিন শেষ হলে কোয়ারেন্টিন থেকেই সরকারিভাবে যাত্রীদের কোভিড টেস্ট করে ছেড়ে দেওয়া হবে। দেশের কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের জন্য জিন এক্সপার্ট মেশিন, মোবাইল পিসিআর ল্যাব ও অ্যান্টিজেন টেস্টের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করা হবে কি না, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশকোনা হজ ক্যাম্পে থাকা জিন এক্সপার্ট মেশিন, মোবাইল পিসিআর ল্যাব ও অ্যান্টিজেন টেস্ট সেন্টারগুলো উদ্বোধন করেন। জিন এক্সপার্ট মেশিন ও মোবাইল পিসিআর ল্যাব উদ্বোধনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, জিন এক্সপার্ট মেশিনে কোভিড-১৯ টেস্টের মাধ্যমে দেশে নতুন আরেকটি প্রযুক্তি যুক্ত হলো। এর আগে এ বছর মার্চ মাস থেকেই দেশে কোভিড-১৯ টেস্ট শুরু করা হয়। শুরুতে মাত্র একটি পিসিআর ল্যাব ছিল। বর্তমানে ১১৮টি পিসিআর ল্যাব চালু করা হয়েছে। এরসঙ্গে অ্যান্টিজেন টেস্ট যুক্ত করা হয়েছে। আজ নতুনভাবে জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু হলো। সুতরাং কোভিড মোকাবিলায় আমরা সব দিক দিয়েই এখন সেবার মান বৃদ্ধি করেছি। কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতের যথোপযুক্ত উদ্যোগ থাকায় দেশের মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান রয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
মোবাইল পিসিআর ল্যাব প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মোবাইল পিসিআর ল্যাবটি এশিয়ার সর্বপ্রথম বিএসএল-২ সমৃদ্ধ ও আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল আরটি পিসিআর (করোনা টেস্টিং) ল্যাব। যেখানে রোগীরা নিজের অবস্থানে থেকেই নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে করোনা পরীক্ষা ও অনলাইনে রিপোর্ট পাবেন। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের মতো জরুরি প্রয়োজনে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হয়ে বা দেশের বিভিন্নপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পাঞ্চলে গিয়ে স্যাম্পল নেওয়া এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে যথাসময়ে অনলাইনে রিপোর্ট প্রদানের সুবিধা থাকছে এই মলিক্যুলার ল্যাবে।
জাহিদ মালেক বলেন, যুক্তরাজ্যে দেখা দেওয়া নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কি না, সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে লকডাউন দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি হয়নি। করোনার রোগীদের জন্য অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই বলেও দাবি করেন মন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফ্লাইট সাসপেনশনটা আমাদের আলোচনায় আছে। অতি তাড়াতাড়ি আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব। আমাদের দেশে তো সে ধরনের কোনো পরিবেশ হয়নি লকডাউন দেওয়ার মতো। কাজেই ওই বিষয়ে আমরা এখন চিন্তাভাবনা করছি না।’
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে ও গ্লোবাল ফান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯ টেস্ট শুরু হয়েছে। এই টেস্ট পরিচালনা করার জন্য আরটি পিসিআরের মতো তিনটি পৃথক কক্ষের প্রয়োজন হয় না। এই পদ্ধতিতে পিসিআর রি-এজেন্ট কার্টিজে আগে থেকেই দেওয়া থাকে। তাই নিউক্লিক এসিড এক্সট্রাকশন, অ্যামপ্লিফিকেশন, ডিটেকশন প্রক্রিয়া কার্টিজের মধ্যে সম্পন্ন হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএমএফআরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফাইজুর রহমান, লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।