শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের মামলা প্রত্যাহার ও বিচার বিভাগীয় কমিশনের দাবি
মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ ও সুনামগঞ্জের ঝুমন দাসসহ সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রমূলক সকল মামলা প্রত্যাহার করে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। একই সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের প্রশাসনকে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ও তার পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে মুন্সীগঞ্জ সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে ‘মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও সন্ত্রাস প্রতিহতকরণে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ দাবি করা হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ ও সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর। বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইনগত বিশ্লেষণ তুলে ধরেন বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুজ্জামান আনিস, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব ও বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মফিদুল হক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সদস্য ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, সদস্য ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব প্রমুখ।
এদিকে লিখিত বক্তব্যে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার প্রদান ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি করা হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক বৈষম্য, বিদ্বেষ, সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য অবিলম্বে বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, ওয়াজের নামে ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা যারা ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত ও ভিন্ন জীবনধারার অনুসারীদের প্রতি অনবরত বিষোদগার করে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের জমি ঊর্বর করেছে, তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে লিখিত বক্তব্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, আমরা আজ এসেছি বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানাতে। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির প্ররোচনায় স্কুলের কিছু ছাত্র যেভাবে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে হেনস্তা করেছে, ভিকটিমকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো তাকে গ্রেপ্তার করে প্রশাসন যে ন্যক্কারজনক আচরণ করেছে, তার তীব্র নিন্দা করছি।
মতবিনিময়কালে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি স্তরে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী চক্রের প্রবেশ ঘটেছে। এ চক্রটি বাংলাদেশে পাকিস্তান কায়েম করতে চায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে ক্ষমতায় বসানো। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার মূল টার্গেট নিয়েছে মৌলবাদী চক্র।
জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বলের সঞ্চালনায় মতবিনিময়কালে স্থানীয়দের মধ্যে বক্তৃতা করেন- ঢাকা জজ কোর্টের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি সালমা হাই টুনি, জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ কাদের মোল্লা, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাছিমা আক্তার, জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক হামিদা খাতুন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক নবীন চন্দ্র রায়, জেলা সিপিবির সাবেক সভাপতি শ ম কামাল, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সোহেল, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর চক্রবর্তী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম মাওলা তপন, সাংস্কৃতিক কর্মী অভিজিত দাস ববি, মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভবতোষ চৌধুরী নূপুর প্রমুখ।