শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুঁতে রাখা হয়েছিল কলেজ অধ্যক্ষের খণ্ডিত মরদেহ
সাভারে নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মিলেছে কলেজ অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মণের খণ্ডিত মরদেহ। ওই কলেজের প্রাঙ্গণে মাটি খুঁড়ে আজ সোমবার দুপুরে তাঁর খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। এর আগে নিখোঁজের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে প্রথমে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষকসহ তিন জনকে আটক করে র্যাব। তাঁদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের পরই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
মিন্টু চন্দ্র বর্মণ ছিলেন আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়াইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পরিবার গ্রামের বাড়িতে থাকে।
র্যাব জানায়, মিন্টু চন্দ্র বর্মণ সাত বছর ধরে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি সেখানকার আমিন মডেল টাউন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন। দুবছর আগে তিনিসহ চার জন মিলে জামগড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সাভার রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্য তিন সহপ্রতিষ্ঠাতা হলেন রবিউল ইসলাম, মোতালেব ও শামসুজ্জামান। মিন্টু চন্দ্র বর্মণ ছিলেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। গত ১৩ জুলাই থেকে তাঁর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্ব ও মালিকানা নিয়ে প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এরপর ১৩ জুলাই হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন অধ্যক্ষ মিন্টু। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও না পেয়ে গত ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মিন্টুর ছোট ভাই দীপক চন্দ্র বর্মণ।
এ ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব আটক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গণিত বিষয়ের শিক্ষক রবিউল ইসলাম, তাঁর ভাগনে বাদশা ও ইংরেজির শিক্ষক মোতালেবকে। তাঁরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ওই শিক্ষককে ১০৬ নম্বর কক্ষে মেরে প্রথমে লাশ ছয় টুকরো করা হয়। এরপর পরিকল্পনা করা হয়, ঘরের মেঝে খুঁড়ে লাশ পুঁতে ফেলার পর জায়গাটি প্লাস্টার করার। তবে করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় কেউ সন্দেহ করবে না ভেবে দেহাংশ টুকরো করে দুটি পা ও বুক থেকে নাভি পর্যন্ত অংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পুঁতে ফেলা হয়। এবং দেহ থেকে মিন্টুর মাথা বিচ্ছিন্ন করে উত্তরায় একটি ডোবায় ফেলা দেওয়া হয়।
র্যাব-৪ সিপিসি-২-এর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মাহমুদ খান বলেন, ‘নিখোঁজের ঘটনাটি র্যাব উদ্ঘাটন করেছে। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের ভাষ্য—স্কুলের শ্রেণিকক্ষেই মিন্টু বর্মণকে কুপিয়ে খুন করা হয়। পরে লাশ ছয় টুকরো করে স্কুলের মাঠেই পুঁতে ফেলা হয়। এরপর বিচ্ছিন্ন মাথা ফেলা হয় দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকায়। আটক সবাই খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।’