শুরু হচ্ছে পৌরসভার ভোট-উৎসব
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে নানা আলোচনা-সমালোচনায় থাকা নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন করতে যাচ্ছে। ভোটারের ‘খরা’ আর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে এরই মধ্যে তিন ধাপে দেশের প্রায় অর্ধেক পৌরসভায় ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মোট চার ধাপে শেষ হবে এবারের পৌর নির্বাচন।
সোমবার সকাল থেকে ২৪ পৌরসভায় ভোটের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড। এসব পৌরসভায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটাররা মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
নির্বাচনের আগের দিন রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বিএনপির আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে বলেই তারা নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের আগেই হেরে যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আসলে বিএনপির রাজনীতি কচ্ছপের মতো। একবার মাথা বের করে তো পরক্ষণেই আবার মাথা লুকায়।’
অপরদিকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘বিরোধী দলের যে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হলেই বা প্রার্থীর পক্ষে কেউ প্রচার চালাতে গেলে তাকে জীবন হারাতে হয় কিংবা চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। বিনা ভোটে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী সরকার এখন বেপরোয়া। নির্বাচন ঘোষণা করবে, কিন্তু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে দেবে না।’
পৌরসভার এই নির্বাচন এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন এর আগের বেশ কয়েকটি নির্বাচন ও উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই ন্যূনতম পর্যায়ে। যা নিয়ে খোদ ইসিকেই ‘বিব্রত’ হতে দেখা গেছে। ওইসব ভোটে প্রার্থীদের প্রচেষ্টা ছিল কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর। কিন্তু এতে খুব বেশি কাজ হয়েছে- এমনটা প্রতিফলিত হয়নি। এখন দেখার বিষয়, পৌরসভার ভোটযজ্ঞে ভোটাররা কতোটা আগ্রহ দেখান।
শনিবার মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পৌরসভায় নির্বাচনী প্রচার শেষ করেছে প্রার্থীরা। রোববার সকাল থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
ইসি বলছে, ভোটের মাঠে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরাও থাকবেন। সুতরাং ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে ইসির আশা।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার নির্বাচনী এলাকায় কোনো সাধারণ ছুটি থাকছে না। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার বা নির্বাচনী কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত রয়েছে, সেগুলো বন্ধ থাকবে।
রোববার সন্ধ্যায় ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, ‘আমরা ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে মালামাল চলে গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোনো ধরনের বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আমরা তা প্রতিহত করার চেষ্টা করব। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে তেমন নির্দেশনাই দেওয়া আছে।’
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখা বলছে, ইসির কাছে আসা সর্বশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনী এলাকায় পরিবেশ-পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। এ ছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মাঠ তদারকি করছে। যেসব কেন্দ্র ইসির কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে, সেসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হবে।
ইসির ওই সূত্রটি আরো বলছে, যেহেতু ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে, সেহেতু পর্যাপ্ত টেকনিক্যাল লোকজন কাছেই রাখা হয়েছে। মোদ্দাকথা হচ্ছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রথম ধাপের পৌরসভার এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মেয়র পদে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী।
গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপের ২৫টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তবে মাঝপথে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী মারা যান। এরপর ওই পৌরসভায় ১৬ জানুয়ারি ভোটের দিন নির্ধারণ করে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ইসি। সুতরাং ওই একটি বাদে বাকি ২৪টি পৌরসভায় সোমবার ভোটগ্রহণ করা হবে।
২৪ পৌরসভায় মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন ১০০ জন। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৬৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ৮০১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিটি পৌরসভায় একজন মেয়র, তিনজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও নয়জন করে সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। ভোটের পরপরই ফল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার চার ধাপে পৌর নির্বাচন করছে কমিশন। এরমধ্যে তিন ধাপে ১৫০টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ। আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ২৯টি পৌরসভায় ইভিএম এবং ৩২ পৌরসভায় ব্যালটে ভোটগ্রহণ হবে। আর তৃতীয় ধাপে ৬৪টি পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে সর্বশেষ তফসিল দেওয়া হয়েছে। বাকি যেসব পৌরসভা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন উপযোগী হচ্ছে, সেসব এলাকায় চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ করা হবে।
সোমবার যেসব পৌরসভায় ভোট হবে তা হলো- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, কুষ্টিয়ার খোকসা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনার চালনা, বরগুনার বেতাগী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোনার মদন, মানিকগঞ্জ, ঢাকার ধামরাই, সুনামগঞ্জের দিরাই, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড।