সারা দেশে প্রথম দিনের ‘কঠোর’ লকডাউন যেভাবে চলল
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। আজ ১৪ এপ্রিল বুধবার থেকে শুরু হওয়া এ লকডাউন চলবে আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়ও লকডাউনের প্রথম দিন কঠোরভাবে পালন করা হয়েছে।
আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সর্বাত্মক লকডাউনের খবর সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ : জেলায় সরকারি নির্দেশনে মেনে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের দোকানপাট, হোটেল, রেস্তোরাঁ। মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস আজ চলাচল করেনি। পুলিশ শহরের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে বাইকসহ ব্যক্তিগত সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়েছে। ছোট যানবাহনের আরোহীকেও চিকিৎসা ছাড়া চলাচলে নিষেধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে সর্বসাধারনকে পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। সড়কে যানবাহনের পাশাপাশি মানুষের চলাচলও কম দেখা গেছে। তবে জরুরি সেবা ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে।
সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর : সকাল থেকে ফরিদপুরে কঠোরভাবে পালিত হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন।
জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোতে চলাচলে বিধিনিষেধ করা হয়েছে। সকালে নতুন ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, জনতা ব্যাংক মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার সড়কে কোনো গণপরিবহণ নেই। তবে এসব এলাকার সড়কে শুধু পণ্যবাহী কিছু যানবাহন ও অটো চলছে। রাস্তায় মানুষজন সীমিত। কোথাও কোথাও বাঁশের বেড়া দিয়ে গাড়ি ও সাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।
হালিম খান, নাটোর : সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিনে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নেতৃত্বে জেলার সড়কগুলোতে টহল দেয় পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা। একইসঙ্গে শহরের প্রত্যেক প্রবেশপথে বসানো হয় চেকপোস্ট। পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া কোনো ধরনের যান চলাচল করতে দেয়নি পুলিশ। ওষুধ ও কাঁচাবাজার ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ধরনের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
নাফিজ আশরাফ, নারায়ণগঞ্জ : জেলায় সর্বাত্মক লকডাউনে মার্কেট, শপিং মলসহ দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ প্রহরায় রয়েছে। পণ্যবাহী যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি কাজের যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন এলেও তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোট যানবাহনের অভাবে জরুরি কাজে যারা বেরিয়েছে তাদের দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে চলতে হয়েছে।
শিহাব উদ্দিন বিপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলায় সর্বাত্মক লকডাউনে নির্ধারিত সময়ের পর থেকে সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়নি। বন্ধ ছিল দোকান-পাট, শপিংমলসহ সরকারি নির্ধারিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ। এছাড়াও বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যান চলাচল।
এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে করতে শহরের কুমারশীল মোড়, টিএ রোড, কাউতলী, ভাদুঘর, কোর্ট রোডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ টহল দিচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করেছে।
এস এম উমেদ আলী, মৌলভীবাজার : কঠোর লকডাউন মানতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসানের নেতৃত্বে জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কয়েকটি গ্রুপে বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এ সময় তারা অপ্রয়োজনীয় যানবাহন, দোকানপাট ও বাইরে চলাচলকারী মানুষদের সতর্ক করে দেন। মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহযোগিতা করে র্যাব ও পুলিশ। এ সময় সরকারের বেঁধে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য মাইকিং করা হয়।
এদিকে মৌলভীবাজারে কঠোর লকডাউনে প্রথম দিনে যানবাহন অনেকটা কম চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ঘর থেকে বের হওয়া অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানেননি। মাস্ক পরিধান না করে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখেই কেনাকাটা করতে দেখা যায়। পুলিশ সদস্যদের শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন আটকে চলাচলের কারণ জানতে দেখা গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট ছাড়া অন্যান্য দোকান বন্ধ রয়েছে।
আবু তাহের মুহাম্মদ, খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি জেলা শহরে সরকারি নির্দেশনা মেনে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে সব ধরনের দোকানপাট, হোটেল ও রেস্তোরাঁ। খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস চলাচল করেনি।
বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ‘কঠোর লকডাউন’ কার্যকর করার জন্য পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তৎপর রয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পুলিশ চেকপোস্ট বসায়। ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা। যেসব পেশার মানুষ জরুরি সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের চেকপোস্ট অতিক্রম করার অনুমতি দিয়ে অন্যদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে সর্বসাধারণকে পরামর্শ দেয় পুলিশ।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রশিদ জানান, জনগণ যাতে সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলে এ জন্য কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা।
নাসির আহমেদ, গাজীপুর : করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন চলছে গাজীপুরে। সকাল থেকে বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার বাস, মিনিবাস চলাচল না করলেও পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, পিকআপসহ জরুরি সেবার পরিবহন চলছে। এ ছাড়া রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও হালকা যানবাহন চলতে দেখা গেছে। লকডাউন বাস্তবায়নে মহাসড়কে কাজ করছে পুলিশ।
ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কর্মজীবী মানুষ দূর-দূরান্তে যাচ্ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ নানা ধরনের যানবাহন চড়ে। লোক সমাগম কিছুটা কম থাকলেও রাস্তাঘাটে ও যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশনা মেনে চলার তেমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। দোকানপাট ও বিভিন্ন বিপণী বিতান বন্ধ রয়েছে।
নববর্ষের প্রথম দিনে অধিকাংশ পোশাক কারখানা বন্ধ থাকলেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। এসব কারখানায় শ্রমিকরা হেটে, রিকশা ও হালকা যানবাহনে চড়ে কাজে যোগ দেন। এক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত নিজস্ব পরিবহণে শ্রমিক আনা-নেওয়ার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে খেটে খাওয়া মানুষের জটলা ছিল চান্দনা চৌরাস্তয়। নতুন করে সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে হতাশা।
তারা বলছেন, কর্মহীন অবস্থায় থাকলে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চলাটা দায় হয়ে পড়বে। উপার্জন ছাড়া ঘরভাড়া, সংসার খরচ মেটাতে তাদের সমস্যায় পড়তে হবে।
এদিকে, লকডাউন বাস্তবায়নে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি জোরদার করেছে পুলিশ। মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একাধিক টিম কাজ করছে বিভিন্ন এলাকায়।
কাকন রেজা, শেরপুর : শেরপুরে লকডাউন পুরোপুরিভাবে পালিত হচ্ছে। জেলা শহরের মোড়ে মোড়ে বসেছে পুলিশের মোবাইল চেকপোস্ট।
জেলা শহরের প্রধান নয়টি জায়গায় এসব চেকপোস্ট বসিয়ে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে পুলিশ। জেলা শহরের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রাস্তাগুলো যানবাহন শূন্য। জরুরি সেবা চালু রয়েছে। খোলা রয়েছে খাবারের দোকান।
এর মধ্যেও কিছু কিছু লোককে ঢাকা থেকে আসতে দেখা গেছে। ছোট গাড়িতে তারা ভেঙে ভেঙে রাস্তা পাড়ি দিয়ে শেরপুর এসেছেন।
মিজানুর রহমান, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ জেলা শহরের পোস্ট অফিস মোড়, বাস টার্মিনাল, আরাপপুর, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সড়কে চলাচলকারীদের তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। সকালে স্থানীয় চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সাতক্ষীরাগামী একটি ট্রাক তল্লাশি করার সময় ৪৩ জন যাত্রী পাওয়া যায়। পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। জেলার অন্য উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে রয়েছে প্রশাসন।
মো. আলমগীর হোসেন, ভালুকা : ভালুকায়ও ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন চলে। ১৪ এপ্রিল থেকে কঠিন লকডাউন চলবে, জরুরি প্রয়োজন না থাকলে মানুষ ঘর থেকে বের হবে না। সড়কে থাকবে না কোনো যাত্রীবাহী যান। কিন্তু বাস্তবে মানুষের চলাফেরা ছিল প্রায় অন্যদিনের মতোই স্বাভাবিক। সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করলেও তিন চাকার গাড়ির দখলে ছিল মহাসড়ক। সড়কে আইনশৃখলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা ছিল না। ফলে যাত্রীদের বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভালুকার আশপাশের উপজেলা গফরগাঁও, ত্রিশাল, শ্রীপুরের জৈনাবাজার, মাওনাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
আতিকুর রহমান সোহাগ, বগুড়া : বগুড়ায় ঢিলেঢালাভাবে চলে সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন। শহরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ। দূরপাল্লাসহ সব যানচলাচল বন্ধ থাকলেও শহরে সীমিত আকারে চলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
আজ সকাল থেকেই জেলা প্রসাশকের নির্দেশে ভ্রামমাণ আদালত পরিচালিত হয়। শহরের সাতমাথা এলাকায় উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করায় বেশকয়েকজনকে ২০০ টাকা করে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।শহরে স্বাভাবিকের চেয়ে কমসংখ্যক মানুষ চলাচল করে। কাঁচাবাজারেও ক্রেতা সমাগম ছিল কম।
মো. জালাল উদ্দিন, কুমিল্লা : দ্বিতীয় দফার সর্বাত্মক লকডাউন চলছে কুমিল্লায়। কুমিল্লা নগরীতে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। কাঁচাবাজার ও ওষুধের দোকান ছাড়া শপিংমল ও সব মার্কেট বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ছোট ছোট যানবাহন চলাচলও। বুধবার দুপুরে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নগরীর কান্দিরপাড়সহ বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করেন। সর্বাত্মক লকডাউন পালনে বাধ্য করতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছেন।
মাহবুব হোসেন সারমাত, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জেও আজ বুধবার সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন চলছে। সকাল থেকেই সড়ক ও মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধন রয়েছে। বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী কাঁচাবাজার খোলা রয়েছে। এ ছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য এবং ওষুধের দোকান ব্যতীত বন্ধ রয়েছে সব বিপণিবিতান। বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের মনিটরিং টিম। তবে কাঁচাবাজার এলাকায় মানুষের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
লকডাউন কার্যকরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন। সকালে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এবং সরকারি আইন অমান্য করায় ছয়জনকে তিন হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।
আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ : করোনার ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে আজ থেকে সারা দেশের ন্যায় নওগাঁতে শুরু হয়েছে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন। এই লকডাউনে জরুরি কাজ ছাড়া বের না হওয়ার সরকারি নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কাঁচাবাজারগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। শহরের বিভিন্ন মোড়ে বিভিন্ন অজুহাতে বের হতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। তবে বন্ধ আছে সব দোকানপাট। সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কিছু রিকশা চলাচল করছে সড়কে। আবার অনেক মানুষকে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে। তবে লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে আছে প্রশাসন। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শহরের ব্যস্ততম মুক্তির মোড়, তাজের মোড়, দয়ালের মোড়, কাজির মোড় সড়কে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়ে যেসব পরিবহণ বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছে তাদের মামলা দিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। অনেককে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে। মাইকিং করে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। বেশি প্রয়োজন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি দিয়ে তাঁকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দোকানপাট খোলা রাখার দায়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জরিমানা করতে দেখা গেছে।
নওগাঁ জেলার অভ্যন্তরীণ রুটসহ দূরপাল্লার কোনো রুটে গণপরিবহণ চলছে না। শহরের বিভিন্ন সড়কে দু-একটি রিকশা ও মোটরসাইকেল ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে কড়া পুলিশি তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশিদ সবাইকে নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থে লকডাউন মেনে চলার আহ্বান জানান।
জেলার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান মিয়া সরকার ঘোষিত লকডাউন সফল করতে পুলিশ বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান।
শফিকুল ইসলাম শফিক, মাগুরা : করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিনে মাগুরায় সর্বাত্মক লকডাউন পালন করতে দেখা গেছে। আজ বুধবার দুপুরে মাগুরা শহরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক, ভায়না মোড় ও কলেজ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। তবে শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকায় লোকজনের চলাচল কম রয়েছে।
আব্দুল আজিজ শিশির, শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে কঠোরভাবে পালিত হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন। আজ বুধবার সকাল থেকে শরীয়তপুর লঞ্চঘাট থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের লঞ্চ এবং বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে জেলা শহরে অটো গাড়িসহ অন্যান্য কিছু যানবাহনের চলাচল ছিল। সেগুলোতেও কম যাত্রী পরিবহণ করতে দেখা গেছে। লকডাউনকে সফল করতে ছয়টি উপজেলায় সাতটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ জনসাধারণকে সচেতনা করতে মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন জেলা প্রশাসক মো পারভেজ হাসান।
জেলা পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান বলেন, প্রয়োজন ছাড়া কেউ যদি ঘরের বাইরে বের হয় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি নিজেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে জনসচেতনতা মূলক পরামর্শ দিচ্ছেন।
শহরের বেশিরভাগ দোকানপাঠ বন্ধ। তবে রাস্তার পাশে কাঁচাবাজারে দোকানগুলোতে বেচাকেনায় ভিড় দেখা গেছে। সকালের দিকে রাস্তাঘাটে মানুষজন তুলনামূলক কমই ছিল।