সালথায় লকডাউনে লাঠিপেটা নিয়ে হামলা-অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গুলিতে নিহত ১
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় লকডাউনে এসিল্যান্ডের সহকারীর লাঠিপেটাকে কেন্দ্র করে সালথা থানা ও উপজেলা কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন আমির, মিরান ও মামুন নামের আরও তিনজন। তবে আরও অনেকে আহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
আহতদের ঢাকায় ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুলিতে নিহত যুবক হলেন উপজেলার রামকান্তপুর এলাকার জুবায়ের হোসেন (১৮)।
রামকান্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. লিটু পুলিশের গুলিতে ওই যুবকের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গতকাল বিকেলে সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে চা খেয়ে মো. জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় সেখানে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে আসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামনি উপস্থিত হন।
জাকির হোসেনের অভিযোগ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই এসিল্যান্ডের গাড়ি থেকে নেমে এক ব্যক্তি তাঁর কোমরে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে তাঁর কোমর ভেঙে যায়। পরে আহত জাকির হোসেনকে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, জাকির হোসেনকে আহত করার খবরে সেখানে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আরও গ্রামবাসী জড়ো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেখানে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপস্থিত হয়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপরেও হামলা চালায়। এতে এসআই মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। পরে সেখান থেকে তারা চলে গেলে দোকানদার ও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে থানা ও উপজেলায় হামলা চালায়। এ সময় ইউএনওর বাসভবন, হলরুমসহ থানায় হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ইউএনওর দুটি গাড়ি ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ‘লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে জনতার সঙ্গে কর্মকর্তাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়। তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয়রা। এক পর্যায়ে গুজব রটিয়ে উপজেলা পরিষদ, থানা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় পুলিশ পর্যাপ্ত ফাঁকা গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।’
এসপি বলেন, ‘ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পাশের থানা ও জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ ও র্যাবের আটজন সদস্য আহত হন।’
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিব সরকার বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা রয়েছে সন্ধ্যা ৬টার পরে কোনো দোকানপাট খোলা থাকবে না। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাজার তদারকিতে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামনি। ফুকরা বাজারে গেলে সেখানে উত্তেজিত জনতা লকডাউন মানবে না বলে জানালে তিনি এলাকা ছেড়ে চলে আসেন। পরে অফিসে ফিরে জানালে পুলিশ গিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা চালায়। তারা পুলিশের ওপরও হামলা করে। পরে বাজারে একটি গুজব ছড়ায় যে, পুলিশ ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। এও রটানো হয়, একজন হুজুরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই গুজব ছড়িয়ে একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা চালায়।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘আমাদের উপজেলার প্রতিটি অফিসে মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ম্যুরাল ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে হামলা করে তারা। আমরা মনে করি, স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী গুজব রটিয়ে এই হামলা চালিয়েছে। আমরা চাই, একটি সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক।’