সিনহা হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল
১৫ জনকে আসামি করে কক্সবাজারের টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে র্যাব। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব ১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪-এর বিচারক তামান্না ফারাহর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্র দাখিল শেষে তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মামলা রুজুর চার মাস আট দিনের মাথায় অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলো। অভিযোগপত্রে তদন্ত সাপেক্ষে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে বরখাস্ত হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাগর দেব পলাতক রয়েছেন। টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৪ জন কারাগারে রয়েছেন। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ আজ সকালে এনটিভি অনলাইনকে জানান, আজ এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে মোট ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি একজন পলাতক রয়েছেন।
এর আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানিয়েছিলেন, র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করলেই সেটি আদালতে দাখিল করা হবে।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র আজ দাখিল করেছে র্যাব।
এদিকে আজ সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলা বাতিল চেয়ে প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর পক্ষে করা রিভিশন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। উভয়পক্ষের যুক্ততর্ক ও শুনানি শেষে আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় খারিজ করে দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছের বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহউদ্দীন জানিয়েছেন, রিভিশন আবেদন খারিজ হওয়ায় তাঁরা এই আদেশের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।
মেজর সিনহা হত্যার পর গত ৫ আগস্ট তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে।
এরপর আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র্যাব হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিনজন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ১৪ জনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
কারাগারে থাকা ১৪ আসামি হলেন—বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
সিনহা হত্যার ঘটনায় তাঁর বোনের করা মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে গত ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহউদ্দীন রিভিশন আবেদন দায়ের করেন। ওই দিন আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
কিন্তু শুনানির ওই নির্ধারিত দিনে সিনহা হত্যার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন ১০ নভেম্বর।
অন্যদিকে মামলাটি শুনানির ওই নির্ধারিত দিনে (১০ নভেম্বর) সিনহা হত্যার মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহউদ্দীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন আবারও পিছিয়ে যায়। ১০ নভেম্বর আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।