সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে ফসল, ডুবছে কৃষকের স্বপ্নও
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় একের পর এক বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। ঢলের পানির সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসল। সেইসঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নও। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার দুই লাখ ২২ হাজার হেক্টর বোরো ফসল হুমকিতে পড়েছে। বৃষ্টি আর ঢলের পানির ধাক্কায় জেলার ১২ উপজেলার সব ছোট-বড় হাওরের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়।
এর পর থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, পিআইসি প্রাণপণ চেষ্টা করছে বাঁধ রক্ষা করতে। শেষমেষ নিজেদের ফসল বাঁচাতে রাতদিন এক করে বাঁশ, কোদাল নিয়ে স্বেচ্ছায় বাঁধের ফাটল মেরামতে হাওরে অবস্থান করছেন কৃষক। কিন্তু, তারপরও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
চলতি মাসের ১ তারিখ থেকেই পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে যায়। নষ্ট হয় শত শত বোরো ফসল। গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কৃষকের শেষ চেষ্টাকে বৃথা করে আরও তিন উপজেলার চার হাওরের বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়।
এর মধ্যে তাহিরপুরের ঘনিয়া কুডির হাওর, শাল্লার একটি বাঁধ, দিরাইয়ের কুলঞ্জ ইউনিয়নের জারলিয়া হাওর ও চাতল হাওরের এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার হেক্টর ফসল তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আগামী আরও কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাত হলে পানি বাড়বে। আর, পানি বাড়লে ঝুঁকিতে থাকা হাওরের বাঁধের ক্ষতি হবে।
এর আগে গত এক এপ্রিল থেকে তাহিরপুর, শাল্লা, ধর্মপাশা ও দিরাইয়ের অন্তত আরও চারটি হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বারো উপজেলার সব ছোট-বড় হাওরের ঢলের পানিতে ফাটল দেখা দেয়। অনেক হাওরের দুর্বল বাঁধের নিচ দিয়েও পানি ঢুকে যায়। প্রশাসনের লোকজন কৃষকদের নিয়ে বাঁধ মেরামতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে, কতক্ষণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে পারবেন, তা নিয়েও আছে সংশয়।
এদিকে, স্থানীয়রা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় দুর্নীতিকে দায়ী করছেন।
যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাঁধের মেরামতের কাজ খুব ভালোভাবে করা হচ্ছে। যদি বাঁধের ওপর দিয়ে পানি যায়, তাহলে পানি ঢুকবে। তবে, এরই মধ্যে তাহিরপুরে দুটি হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে শত শত হেক্টর ফসল তলিয়ে গেছে। তারপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাতদিন হাওরপাড়ের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে বাঁধে অবস্থান করে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করা হচ্ছে। বাঁধের ফাটল টেকাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবীর বলেন, ‘গত রাতে আমরা যে কাজটি করেছি সেটি হচ্ছে, নজরখালী বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছিল, এরপর আমরা গ্রামবাসী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, জনপ্রতিনিধিসহ বাঁধে ছুটে যাই। এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাঁধের মেরামত করি এবং পানির লেভেল যাতে ক্রস করতে না পারে, সেজন্য মাটি আরও উঁচু করে দিয়েছি। ওই বাঁধটি এখন স্ট্যাবল রয়েছে। এ ছাড়া আনন্দনগর বাঁধে আমরা আরেকটি পেরিফেরির মতো বাঁধ করে দিয়েছি। ওইটাও এখন স্ট্যাবল রয়েছে। এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নেই বললেই চলে। এ ছাড়া যখন যেখানে সমস্যা হবে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করব।’
২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের আগাম বন্যায় প্রথম বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর একে একে সবকটি হাওরের বাঁধ ভেঙে শতভাগ ফসল পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়।