সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদ্যাপন
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে আজ শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ ওইসব দেশের নাগরিকেরা। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আজ পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করা হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল আজহা উদ্যাপন
এনটিভির মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি আবু হোসাইন সুমন জানিয়েছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মোংলা উপজেলায় কয়েকটি গ্রামে ঈদুল আজহা উদ্যাপন করা হচ্ছে। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের চটেরহাট বাজার জামে মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজে ইমামতি করেন মসজিদটির ইমাম ও খতিব মো. বেল্লাল সরদার।
নামাজ ও খুতবা শেষে মো. বেল্লাল সরদার বলেন, ‘সৌদিসহ অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে মিল রেখে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও আমরা কয়েক গ্রামের মানুষ উদুল আজহা উদ্যাপন করছি। ঈদের নামাজ শেষে যে যাঁর সাধ্যমতো পশু কোরবানি করছেন।’
মো. বেল্লাল সরদার জানান, মূলত এক যুগের বেশি সময় ধরে সুন্দরবন ইউনিয়নের চটেরহাট, ঢালীরখন্ড, সোনাডাঙ্গা, ঠোটারডাঙ্গা ও দুয়ারীজারা গ্রামের শতাধিক পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদ্যাপন করে আসছেন। নামাজ শেষে আজ পশু কোরবানি করেন মুসল্লিরা।
ঢালীরখন্ড গ্রামের বাসিন্দা কুদ্দুস ইজারদার বলেন, ‘আমরা কয়েক গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করে যে যাঁর সাধ্যমতো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানু দিয়েছি। আমি নিজে একটি ছাগল কোরবানি দিয়েছি।’
ঝিনাইদহ থেকে এনটিভির প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ৮টায় জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলা মোড়ের হযরতের মিল চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের ঈদ জামাতে ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুন্ডু ও চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকে অর্ধশতাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন।
ঈদের জামাতের আয়োজকেরা জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তাঁরা কয়েক বছর ধরে ঈদের জামাতের আয়োজন করে থাকেন। এতে ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়ীয়া, নারায়নকান্দি, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়ীয়া, ফলসী, পায়রাডাঙ্গা, নিত্যানন্দরপুর, এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন।
এনটিভির চাঁদপুর প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করা হচ্ছে। আজ সাদরা দরবার শরীফে দুটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদপুরে ৪০ গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছেন।
জানা গেছে, আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালনের নিয়ম চালু হয় অনেক বছর আগে। হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামে ১৯২৮ সাল থেকে এক দিন আগে ঈদ উদ্যাপনের এ প্রথা চালু করলেও এখন ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ দেশের নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগে ঈদ উদ্যাপন করে।
আজ সকাল ৯টায় সাদরা দরবার শরীফ মাঠে ঈদের প্রথম জামাতের ইমামতি করেন দরবারের পীর জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি। অপরদিকে, সাদরা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় সকাল সাড়ে ৯টায় নামাজের ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মাওলানা আরিফ চৌধুরী।
জেলার যেসব গ্রামে আজ ঈদ উদ্যাপন করা হচ্ছে সেগুলো হলো—হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ কচুয়া ও শাহরাস্তির বেশ কয়েকটি গ্রাম।
এ ছাড়া চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, শরীয়তপুর ও চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি স্থানে মাওলানা ইছহাক খানের অনুসারীরা এক দিন আগে ঈদ উদ্যাপন করেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা গ্রামের পীর বাড়ির সাদ্রা সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ‘শনিবার সৌদি আরবে ঈদ উদ্যাপন হচ্ছে। তাই, সাদ্রাসহ চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে প্রতি বছরের মতো ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’
সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ঈদগাহ মাঠের মুসল্লি বেলাল হোসেন ও শাহমুব জুয়েল বলেন, আমাদের জন্মের পর থেকে সাদ্রা দরবার শরীফে ঈদের নামাজ আদায় করে যাচ্ছি। আমাদের বাপ-দাদারাও নামাজ পড়েছেন। ইনশাআল্লাহ আমরা এভাবেই আদায় করে যাব।
সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মাওলানা আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘সৌদিতে শুক্রবার হজ হয়ে গেছে। তাই, শনিবার আমরা ঈদ উদ্যাপন করছি। আমাদের আনন্দঘন পরিবেশে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের এখানে অন্যান্য স্থানেও ঈদের জামাত হয়েছে। আমরা আমাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করছি।’
শরীয়তপুর থেকে এনটিভির প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ শিশির জানিয়েছেন, জেলার প্রায় ২০টি গ্রামের কিছু মানুষ আজ পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছে। তাঁরা সবাই সুরেশ্বর দরবার শরীফের অনুসারী। প্রতি বছরের মতো সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এবারও ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছেন তাঁরা।
আজ সকাল সাড়ে ৯টায় দরবার শরীফ মাঠে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
সুরেশ্বর দরবার শরীফের গদিনশীল পির ছৈয়দ শাহ নুরে কামাল নুরীর ভাই ছৈয়দ শাহ নুরে বেলাল নুরী ঈদের নামাজে ইমামতি করেন।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা সুরেশ্বর দরবার শরীফের মুরিদেরা একই সময়ে ঈদ পালন করছেন। সুরেশ্বর দরবার শরীফের সব মুরিদ সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ইদ উদ্যাপন করে থাকেন। দরবার শরীফের অনুসারীরা প্রায় শত বছরের বেশি সময় ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদ্যাপন করে আসছেন।
এনটিভির ফরিদপুর প্রতিনিধি সঞ্জিব দাস জানিয়েছেন, জেলার বোয়ালমারী উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের কিছু মানুষ পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছেন। আজ সকাল ৪টায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে তাঁরা ঈদ উদ্যাপন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে এক দিন আগে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় ও কোরবানি দেন।
রাখালতলী পুরাতন মসজিদের ইমাম জয়নাল ফকির রাখালতলী পুরাতন মসজিদ ময়দানে সকাল ৮টায় পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ পড়ান। এ ছাড়া স্থানীয় মাইটকোমরা পুরাতন জামে মসজিদ, নুতন জামে মসজিদ, কাটাগড় পুরাতন জামে মসজিদ, দিঘিরপাড় জামে মসজিদ, বারাংকুলা গ্রামে পবিত্র ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
মাইটকোমরা পুরাতন জামে মসজিদে নামাজ আদায় করার পর ওই গ্রামের বাসিন্দা মোজাম্মেল শিকদার ও আবুল হোসেন বলেন, আমাদের জন্মের পর থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে অগ্রীম ঈদ পালন করে আসছি। সে অনুযায়ী, আজ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করলাম।
একই গ্রামের কালাম শিকদার বলেন, আজ সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। এরপর কোরবানি দেব। বেশ ভালোই লাগছে। আনন্দ লাগছে।
আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় যুবক মো. তামিম লস্কার বলেন, ‘আমার নানা খায়ের শিকদার, মো. আফতাব উদ্দিন শিকদার, মো. মাহবুল শিকদারসহ আমারদের আত্মীয়-স্বজনেরা আজ ঈদের নামাজ আদায় ও কোরবানি করেন। আমরা আগামীকাল ঈদ পালন করব। আমাদের ডাবল আনন্দ। দুদিন ঈদ পালন হয়। দুদিন বেশি বেশি আনন্দ উপভোগ করি। বেশ ভালোই লাগে।’
মাইটকুমরা গ্রামের মাতব্বর মো. আফতাব উদ্দিন শিকদার একছির বলেন, ‘আমরা পূর্বপুরুষের প্রথা অনুযায়ী, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদ পালন করে আসছি। আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে এ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছি।’
মাইটকোমরা জামে মসজিদে ঈদের নামাজের ইমামতি করেন যশোর মাদ্রাসার বাইশ বাড়িয়া সিদ্দিকীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র মো. রিফাত শিকদার। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে অত্র এলাকার বেশ কিছু মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন। এটা তাঁদের পূর্বপুরুষদের রীতিনীতি।
এ বিষয়ে শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমেদ জানান, শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমড়া জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, সহস্রাইল গ্রামে সকাল ১০টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের সহস্রাইল, দড়ি সহস্রাইল, ভুলবাড়িয়া, বারাংকুলা, বড়গাঁ, মাইটকুমড়া, গঙ্গানন্দপুর, রাখালতলী, কাটাগড় ও দিঘীরপাড় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঈদ উদ্যাপন করেন এবং কোরবানি দেন।
এনটিভির দিনাজপুর প্রতিনিধি ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, সৌদি আরবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দিনাজপুরে আজ ঈদ উদ্যাপন করছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার।
দিনাজপুরের সদর, চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল, বিরামপুর উপজেলাসহ বেশ কিছু এলাকায় আজ পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করা হচ্ছে। এসব পরিবারের মুসল্লিরা জেলার বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
আজ শনিবার সকাল পৌনে ৮টায় দিনাজপুর শহরের চারুবাবুর মোড়ে পার্টি সেন্টার নামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নারী-পুরুষসহ দুই শতাধিক মুসল্লি ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। এ জামাতে ইমামতি করেন আব্দুর রাজ্জাক।
এ ছাড়া দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতাড়া, বিরল উপজেলার কান্দেবপুর ও কাজিপাড়া, কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ ও গড়েয়া এবং বিরামপুর উপজেলায় দুটি গ্রামে আজ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জেলায় ১৩টি উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ পালন করছে।