হেলেনা জাহাঙ্গীর আটক, মাদক উদ্ধার
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার রাতের এই অভিযানে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাত আনুমানিক ১টার দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযানে থাকা এক র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযানের গিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় মাদক পাওয়া গেছে। এ মাদক কীভাবে তাঁর বাসায় গেল, তা নিয়েও চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরের নেওয়া হবে। সেজন্য অভিযানের মধ্যপর্যায়ে সেখানে র্যাবের নারী সদস্যদেরও আনা হয়েছে।’
এই আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে অভিযান চালানো হয় গুলশান ২ নম্বরে হোটেল ওয়েস্টিনের পেছনে ৩৬ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বর বাসায়। রাত ৯টার দিকে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার একটি সূত্র এনটিভি অনলাইনকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছিলেন, ‘অনলাইনে নানা ধরনের অপপ্রচারের কারণে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ আছে, যা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করা হবে। কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় এই অভিযান চালানো হচ্ছে।’
সূত্রটি আরও বলেন, অনলাইনে নানাজনকে নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া জয়যাত্রা নামের তাঁর একটি অনলাইন টেলিভিশন রয়েছে। সেখানেও নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে টেলিভিশনটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। মূলত সবকিছু মিলিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত রোববার আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব মেহের আফরোজ চুমকি স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তাঁর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ হতে তাঁকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।’
জানা যায়, নানা বিষয়ে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠন করেন। এতে নিজেকে সভাপতি এবং মাহবুব মনিরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এই সংগঠনে জেলা-উপজেলা ও বিদেশ শাখায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনার পর ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
সংগঠনটির দাবি, গত দুই-তিন বছর ধরেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছিল তারা। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, সংগঠনটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
গত সোমবার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে ফেসবুক লাইভে এসে একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘পুরুষরা এত খারাপ কেন? সব পুরুষ না, কিছু কিছু কাপুরুষ, এত খারাপ। মেয়েদের পিছনে লেগে থাকে, লজ্জা করে না আপনাদের মেয়েদের পিছনে লেগে থাকতে। মেয়েরা না মায়ের জাতি? মা না থাকলে আপনারা জন্ম হতেন না। সেই মেয়েদেরকে আপনারা অপমান করেন, লেলিয়ে দেন; হেলেনা জাহাঙ্গীরের পিছনে লাগো।’
হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি সরকারের জন্য একটা চ্যানেল চালাচ্ছি। সেটা জয়যাত্রা টেলিভিশন। সেই চ্যানেল আমি ভতুর্কি দিয়ে চালাচ্ছি প্রায় চার বছর যাবৎ। আমি চ্যানেলের বাইরে কোনো কাজ করতে পারি না, এত মনোযোগ দিতে হয় আমাকে।’