প্রধান বিচারপতির কথা ‘কানে তুলল’ মানবাধিকার কমিশন
অবশেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার কথায় গাজীপুরের টঙ্গীতে অবিস্থত কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রে বিনা বিচারে আটকে থাকা শিশু-কিশোরদের আইনি সহযোগিতার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। আজ মঙ্গলবার সংস্থাটির একটি প্রতিনিধিদল কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রটি পরিদর্শন করে।
কেন্দ্রে অবস্থান করা শিশুদের বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে দিনব্যাপী কাজ করেছে প্রতিনিধিদল। এ সময় মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য কাজী রেজাউল হক স্থানীয় সাংবাদিক ও কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ইমামুদ্দিন কবীর।
গত ২৬ মে সুপ্রিম কোর্টে একটি আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি গাজীপুরের সংশোধনাগার পরিদর্শনে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেছিলেন, ‘সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক শিশু-কিশোরীকে গ্রেপ্তার করে সংশোধনাগারে আনা হলেও তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি। এতে বিনা বিচারে বছরের পর বছর তারা সেখানে অবস্থান করছে। এ ছাড়া ওই সংশোধনাগারের ভেতরে অনেক শিশু-কিশোরীকে যৌন নির্যাতন করা হয় এমন অভিযোগও আমি পেয়েছি।’
নির্যাতিতদের তালিকা করে নিজে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি ড. মিজানুর রহমানকে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তবে এতে কোনো আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।’
এর পর ২৭ মে সকালে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গাজীপুরের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান। এ সময় বাল্যবিবাহের অভিযোগে আটক ওই কেন্দ্রের কয়েকজন কিশোরী যৌন হয়রানি ও মারধরের বিষয়টি তাঁদের কাছে প্রকাশ করে। পরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মী কাওসার ভূঁইয়াকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এরই ধারবাহিকতায় মানবাধিকার কমিশনের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন। তাঁরা কেন্দ্রের শিশুদের সাথে কথা বলেন।
মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য কাজী রেজাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, সংশোধনাগারগুলো সফর করা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দায়িত্ব। তার বাইরে বিশেষ একটি কারণও রয়েছে। প্রধান বিচারপতি একটি তালিকা আমাদের দিয়েছেন। সেখানে এই কেন্দ্রে ৫৪ ধারায় বা একটি সাধারণ ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে এখানে আটক আছে। এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন আমরা দেব। আমরা চেষ্টা কবর, এখানের শিশুরা যেন হাজিরা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং তারা জামিন পায়। নিরপরাধ শিশুরা যাতে মুক্তি পায় সেটিও আমরা দেখব। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ধরে প্রতিটি মামলা আলাদা আলাদাভাবে দেখা হবে।
নয় বছর বয়সের নিচে কোনো শিশুকেই অপরাধের অভিযোগে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে না পাঠাতে সরকারের কাছে মানাবাধিকার কমিশন জোর সুপারিশ করবে বলে জানান কাজী রেজাউল হক।