বাজেট গণমুখী ও ব্যবসায়ীবান্ধব : চট্টগ্রাম চেম্বার
২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী ও ব্যবসায়ীবান্ধব বলে আখ্যায়িত করেছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ জামাল উদ্দিন আহমেদ।
চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, এ বাজেটে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য নিরসনে সুদূর প্রসারী অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেন। একই সাথে কিছু পণ্যের ওপর আরোপিত কর ও শুল্ক পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।
সৈয়দ জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে প্রণীত সপ্তম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে অধিকতর সমন্বয় এবং পিপিপির আওতাভুক্ত প্রকল্পগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করা জরুরি।
মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান করদাতাদের কোনো ধরনের হয়রানি না করে করের আওতা বাড়ানো এবং নতুন নতুন করদাতা চিহ্নিত করার ওপর চট্টগ্রাম চেম্বারের সহসভাপতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ২০ হাজার থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার, মহিলা ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে করদাতার ক্ষেত্রে তিন লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। যদি মূল্যস্ফীতির হার বর্তমান পর্যায়ে অব্যাহত থাকে তাহলে এই সীমা সাধারণ জনগণের ওপর তেমন চাপ সৃষ্টি করবে না। এ ছাড়া সারচার্জ আরোপের জন্য সম্পদের বিদ্যমান অব্যাহতি সীমা দুই কোটি থেকে বৃদ্ধি করে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সীমা তিন কোটি পর্যন্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি তিন হাজার টাকা সারচার্জ আরোপের প্রস্তাবনা প্রত্যাহারের জন্য তিনি অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। ন্যূনতম কর চার হাজার টাকার প্রস্তাব বাতিল করে আগের বিধান বলবৎ রাখা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কর হার ২৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব অব্যশই প্রশংসনীয়। তবে তিনি মনে করেন পোল্ট্রিশিল্পের আয়ের ওপর প্রস্তাবিত ১৫% কর হার বাতিল করে শূন্য করা এবং হাঁস, মুরগি, চিংড়ি ও মাছের হ্যাচারি থেকে অর্জিত আয়ের সাধারণ কর হারের বিধান অব্যাহত রাখা উচিত। তৈরি পোশাক ও অন্যান্য সব ধরনের রপ্তানি পণ্যের মূল্যের ওপর বিদ্যমান কর হার যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশ ও ০.৬০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা এবং শিক্ষা খাতে আরোপিত কর প্রত্যাহার করার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান।
সৈয়দ জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে আমদানি শুল্কের হার ০, ২, ৫, ১০ ও ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ০, ১, ২, ৫, ১০ এবং ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই স্তর বিন্যাসের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন করা উচিত। শিল্পায়ন ত্বরান্বিত এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতির উপর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ ও কম্পিউটার পণ্যের ২ শতাংশ শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা এবং ৫ শতাংশ রেগুলেটরি শুল্ক কমিয়ে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা, পেঁয়াজ আমদানির শুল্ক শূন্য করা, নিউজপ্রিন্ট তৈরির কেমিক্যালের ক্ষেত্রে প্রদত্ত শুল্ক সুবিধা অব্যাহত রাখা এবং শিল্পে ব্যবহৃত গ্রিজের (খনিজ) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা প্রশংসনীয়।
চট্টগ্রাম চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং গরিব মানুষের ব্যবহার উপযোগী দ্রব্যের ব্যবসায় মূসক অব্যাহতি সীমা ২৪ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা করার যে প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন তা ৩৫ লাখ টাকায় উন্নীত করার জন্য চেম্বার থেকে প্রস্তাব করা হয়। হেপাটাইটিস সি নিরাময়কারী ওষুধসহ এ শিল্পের অনেক কাঁচামাল আমদানিতে মূসক অব্যাহতি ও শুল্ক কমানো হয়েছে। রপ্তানি পোশাক শিল্প, তাঁত ও রেশম শিল্প প্রতিরক্ষায় কিছু পণ্যের শুল্ক সামঞ্জস্য করা হয়েছে যা খুবই বাস্তবমুখী। তবে অপরিশোধিত চিনি আমদানি শুল্ক টনপ্রতি দুই হাজার থেকে চার হাজার এবং পরিশোধিত চিনি চার হাজার ৫০০ থেকে আট হাজারে উন্নীত করার ফলে চিনির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে চেম্বার সহসভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ অভিমত ব্যক্ত করেন।