সাংবাদিক শিমুল হত্যা : হদিস নেই মেয়র মীরুর
গুলিতে আহত দৈনিক সমকালের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল গতকাল শুক্রবার মারা গেছেন। এর পর থেকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মীরুকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়র মীরু আত্মগোপনে চলে গেছেন। এর পর থেকেই তাঁর বেশির ভাগ সমর্থক ও আত্মীয়স্বজন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পৌর এলাকার কোথাও তাদের দেখা যাচ্ছে না। মীরুর মুঠোফোনটিও বন্ধ রয়েছে। তাঁর বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নিহত সাংবাদিক শিমুলের বাড়িতে যান সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মিরাজ উদ্দিন আহমেদ। সে সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
শাহজাদপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব ওয়াহিদ কাজল জানান, শাহজাদপুর পৌরসভা নির্বাচনে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন। ওই সময় মীরু ও তাঁর দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টু বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে পৌর এলাকার মধ্যে ভোট সন্ত্রাস চালিয়েছিলেন।
কাজল বলেন, ‘তাঁর (মীরু) সন্ত্রাসী বাহিনী সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুর রহিমের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও সমর্থকদের মারধর করেছিল। সে সময়ে আমিও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হয়েছিলাম। আমি সাংবাদিক শিমুল হত্যা এবং আমার সহকর্মী বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
স্থানীয় সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, শুক্রবার দুপুরে শিমুলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর মেয়র পুলিশের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে আত্মগোপন করেছেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার না করে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
এ বিষয়ে নিহত শিমুলের ভাই আজাদ হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে মেয়র মীরু পরিকল্পিতভাবে শিমুলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। আমরা মেয়র মীরু ও তাঁর দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হক জানান, শিমুলের মৃত্যুর পর থেকেই মেয়র মীরুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।
শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সাংবাদিক শিমুল হত্যার ঘটনায় শুক্রবার রাতে তাঁর স্ত্রী নুরুন নাহার (৩৮) বাদী হয়ে শাহজাদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মীরু, তাঁর ভাই মিন্টু, সাবেক কাউন্সিলর পিজুস ও আওয়ামী লীগ নেতা নাসিরসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন তিনি। ইতিমধ্যে পৌর মেয়রের দুই ভাই পিন্টু ও মিন্টু আটক করেছে পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার সকালে শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের চাচা এরশাদ আলী বাদী হয়ে পৌর মেয়র ও তাঁর ভাইদের আসামি করে আরো একটি মামলা করেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মীরুর ছোট ভাই হাসিবুল হক পিন্টু শাহজাদপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারপিট করেন। পরে মেয়রের বাসা থেকে পুলিশ পিন্টুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে বিজয় মাহমুদকে মারপিটের ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি মেয়রের বাসার সামনে পৌঁছালে কতিপয় লোক মেয়রের বাসা লক্ষ্য করে ঢিল মারে। একপর্যায়ে মেয়র তাঁর ব্যক্তিগত শর্টগান থেকে গুলিবর্ষণ করেন।
এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুলসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়।
গুরুতর আহত সাংবাদিক শিমুলকে প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তী সময়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গতকাল দুপুরে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে দুপুর ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় এলাকায় সাংবাদিক শিমুল মারা যান।