সাফাত-নাঈমদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় রেইনট্রি!
রাজধানীর বনানীতে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ মামলার আসামিসহ জড়িত সবার বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, তাদের হোটেলে ওই ধর্ষণের ঘটনায় হোটেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত নেই। জড়িত থাকলে তাদেরও বিচার চায় তারা।
আজ মঙ্গলবার সকালে রেইনট্রি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে মালিকপক্ষ এসব দাবি করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন রেইনট্রি হোটেলের অর্থায়নকারী হুমায়রা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন হোটেলের ৭০০ এবং ৭০১ নম্বর স্যুইটে ভিকটিমদের সঙ্গে ন্যক্কারজনক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, তা আদালতে প্রমাণিত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করেছে। আমরা এই ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত সাফাত ও নাইমসহ জড়িত সব অপরাধীর বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সাফাত-নাঈম চক্রের ঘৃণ্য অপরাধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হোটেল রেইনট্রি। আমরা বিশ্বাস করি অপরাধীরা যে জঘন্য অপরাধ করেছে তার শাস্তি তাদের ভোগ করতেই হবে। কিন্তু এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিনা অপরাধে আমাদের হোটেলের ব্যবসা অঙ্কুরেই ধ্বংসের মুখে পতিত হতে চলেছে।’
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ হোটেলে কোনো অতিথি আসছেন না। এমনকি আগামী দুই সপ্তাহে যাদের আসার কথা ছিল তাদের সবাই বুকিং বাতিল করেছেন। হোটেলে অবস্থানরত অতিথিরাও হোটেল ত্যাগ করেছেন।’
ধর্ষণ মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তদন্তে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে আশ্বাস দেন গোলাম মোস্তফা।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম আদনান হারুন। তিনি ঝালকাঠি-১ (কাঁঠালিয়া-রাজাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক (বিএইচ) হারুনের ছেলে। সংসদ সদস্যের আরেক ছেলে ও আদনান হারুনের ছোট ভাই মাহির হারুন রেইনট্রি হোটেলের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিষয়ক পরিচালক। মাহির হারুনের সঙ্গে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
তবে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে সাফাতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন আদনান হারুন। ঘটনার দিন সাফাতের জন্য মাহির হারুন জন্মদিনের কেক পাঠিয়েছিলেন- এ বিষয়ে আদনান হারুন বলেন, হোটেলের রীতি অনুযায়ী জন্মদিনে অতিথিকে কেক উপহার দেওয়া হয়। এখানে কোনো ব্যক্তি-সম্পর্কের বিষয় নেই।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান কতক্ষণ হয়েছিল-এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি আদনান হারুন। ফের জানতে চাইলে বলেন, এ নিয়ে তিনি কিছু বলবেন না। বিষয়টি তদন্তাধীন। আদনান হারুন বলেন, হোটেলে কোনো অপরাধ হয়েছে কি না, তা আদালতে প্রমাণিত হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে।
তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কেন সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে হোটেল কর্তৃপক্ষ চুপ থাকে। প্রশ্নের একপর্যায়ে কর্মকর্তারা উঠে চলে যান।
এর আগে আদনান হারুন সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের হোটেলটি ‘সফট ওপেনিং’ পর্যায়ে আছে। এ সময় কিছু ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তিনি বলেন, ঘটনার দিন হোটেলের ৭০০ ও ৭০১ নম্বর স্যুট ভাড়া নিয়েছিলেন সাফাত। সেদিন রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হোটেলে অবস্থান করছিলেন হোটেলের মহাব্যবস্থাপক ফ্র্যাঙ্ক ফরগেট। এই সময় পর্যন্ত তিনি অস্বাভাবিক কোনো কিছু লক্ষ করেননি।
এর আগে হোটেল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ওই রাতে হোটেলে অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। ধর্ষণ মামলার বাদী হোটেল কর্তৃপক্ষকে কোনো অভিযোগ করেননি। পরের দিন সকালে তাঁরা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে আজ প্রশ্ন করলে আদনান হারুন বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তিনি কিছু বলবেন না।
হোটেলে মদের বারের অনুমতি না থাকার পরও মদ পাওয়া প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত ১৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হোটেলে অভিযান চালিয়ে কোনো মাদক খুঁজে পায়নি। ওই দিনই সন্ধ্যায় হোটেলের সিসিটিভি সিস্টেম জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই পরের দিন সকালে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অভিযানে হোটেলে কীভাবে মদ পাওয়া গেল সেটা আমাদেরও প্রশ্ন আপনাদের বিবেকের কাছে।
ঘটনার সময়কার সিসি টিভি ফুটেজ না থাকার কারণ জানতে চাইলে আদনান হারুন জানান, আন্তর্জাতিক হোটেল নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ দিনের বেশি সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিরাইট হয়ে যায়, তা সংরক্ষণ থাকে না। তাই ফুটেজ মুছে যাওয়ার সঙ্গে হোটেলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, ‘আমাদের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি এই ন্যক্কারজনক অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে আমরা অবশ্যই কড়া বিচার চাই, বিচার দাবি করব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা সহযোগিতা করব এবং তাদের রিকোয়েস্ট করব যেন তারা তদন্ত করে এই জিনিসটা উদঘাটন করে।’
গত ২৮ মার্চ রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী। পরে ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন ওই দুই ছাত্রীর একজন। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা রেইনট্রি হোটেলে মামলার বাদী এবং তাঁর বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। বাদী ও তাঁর বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ এবং বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
গত ১১ মে মামলার আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তাঁর বন্ধু সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল সোমবার সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলীকে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে এবং নবাবপুর রোডের ইব্রাহিম হোটেল থেকে গাড়িচালক বিল্লালকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাফাতকে ছয়দিন, সাকিফকে পাঁচদিন, বিল্লালকে চার দিন এবং রহমত আলীকে তিন দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন।