ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ আর নেই
‘অপরাজেয় বাংলা’র ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ আর নেই। রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১২টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। স্ত্রী উম্মে কুলসুম, দুই ছেলে সৈয়দ আবদুল্লাহ মহি ও সৈয়দ আবদুল্লাহ জহীর এবং মেয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ নাহিদসহ অসংখ্য স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গতকাল রাতে আবদুল্লাহ খালিদের ছোট ছেলে সৈয়দ আবদুল্লাহ জহীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ডা. আরিফ আহসানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাত পৌনে ১২টায় তিনি মারা গেছেন।
ভাস্কর আবদুল্লাহ খালিদের মরদেহ আজ রোববার বেলা ১১টায় শিল্পীর প্রিয় শিক্ষাঙ্গন চারুকলা অনুষদে আনা হবে। ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চারুকলা চত্বরে থাকবেন তিনি। দুপুর ১২টায় নেওয়া হবে তাঁর অমর সৃষ্টি অপরাজেয় বাংলার সামনে। সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ রাখা হবে।
তার পর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে ভাস্কর আবদুল্লাহ খালিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
গত ১০ মে সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে তাঁকে সিলেট থেকে এনে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১০ মে থেকে বারডেমের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিউ) ভর্তি ছিলেন। তিনি ফুসফুস-সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান তাঁর ছোট ছেলে।
সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ‘অপরাজেয় বাংলা’ স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্রের সামনে অবস্থিত ম্যুরাল ‘আবহমান বাংলা’ ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান দপ্তরের সামনে টেরাকোটার ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে ‘অঙ্কুর’, ‘অঙ্গীকার’, ‘ডলফিন’, ‘মা ও শিশু’ ইত্যাদি। শিল্পকলা ও ভাস্কর্যে গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৪ সালে শিল্পকলা পদক এবং ২০১৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ সিলেট জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টস (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চিত্রাঙ্কন বিষয়ে স্নাতক এবং পরে ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে আবদুল্লাহ খালিদ কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭২ সালে সেখানকার লেকচারার থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর উদ্যোগে কলাভবনের সামনে নির্মিতব্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক অপরাজেয় বাংলার নির্মাণের দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭৩ সালে ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর নির্মাণকাজ শেষ করার পর স্থাপনাটির উদ্বোধন করা হয়। (মাঝখানে এর কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল।)