ভাবমূর্তি রক্ষায় কোনো প্রভাবশালীকে ছাড় নয় : ওবায়দুল
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন,ভাবমূর্তি রক্ষায় দলীয় কোনো প্রভাবশালীকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের দপ্তর ও উপদপ্তর সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠককালে ওবায়দুল এই মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের নেতা সিরাজগঞ্জের মেয়র, চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড় দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অপকর্মের জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলার নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক সময় জেলা নেতারা কাউকে ইচ্ছামতো বহিষ্কার করে থাকেন এবং ভাঙেন। এটা করা যায় না। এটা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রবিরোধী। কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী কমিটির অনুমতি ছাড়া কাউকে বহিষ্কার করা যাবে না। আপনারা সুপারিশ করতে পারেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে ওবায়দুল বলেন, ‘আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আপনাদের আচরণ যেন কোনোভাবেই জনগণকে ক্ষুব্ধ না করে। নেত্রী বলেছেন, জেলার আগাছা-পরগাছাদের দূর করতে। আর কোনো অভিযোগ থাকলে আগে নিজ নিজ বিভাগের সাংগঠনিক ও যুগ্ম সম্পাদককে অবহিত করতে হবে। সরাসরি দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করা যাবে না।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবনে পুলিশি তল্লাশির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন,‘হঠাৎ করে কেন হলো, সে বিষয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির (পুলিশের মহাপরিদর্শক) সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা আমাকে বলেছেন, তাঁদের কাছে কিছু গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল। তার ভিত্তিতে তাঁরা তাঁদের অভিযান পরিচালনা করেছেন।’
‘তখন গণতন্ত্র কি ঠিক ছিল?’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবনে পুলিশি তল্লাশি প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র নাই—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের এমন বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, ‘এখন এর সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণতন্ত্রের সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন। তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, দফায় দফায় আমাদের পার্টি অফিসে হামলা করেছে। আমাদের সিআরআইয়ের (আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন) অফিস সিলগালা করে দিয়েছিল। তাদের সময় আওয়ামী লীগ অফিসে শুধু অভিযান চালানো হয়নি,আওয়ামী লীগ অফিসে নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, অফিসের ওপর লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। এসব কি তারা ভুলে গেছে? তখন কি গণতন্ত্র সঠিক ছিল?’
‘আমাদের অফিসের সামনে তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা একুশে আগস্টের সমাবেশে সুপরিকল্পিতভাবে যে গ্রেনেড হামলা করেছে সে কি গণতন্ত্র? আইভী রহমানসহ ২৩ জনের রক্ত ঝরল, এটা রক্তাক্ত গণতন্ত্র ছিল। দৃষ্টান্ত কারা স্থাপন করেছে? বড় বড় কথা বলে লাভ নেই। গণতন্ত্রের নামে যে হত্যা নির্যাতন করা হয়েছে, আমাদের পার্টি অফিসের সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করতে দেয়নি। এটা কি গণতন্ত্র?’
‘নেত্রীর জরুরি নির্দেশ’
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সব জেলা ও উপজেলায় যেন একটি অফিসে থাকে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।এটা নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) জরুরি নির্দেশ।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আহমদ হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
প্রাথমিক বৈঠক শেষে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত নেতাদের সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের ওপর প্রশিক্ষণ দেন। এর পর প্রতিটি জেলা কার্যালয়ের জন্য একটি করে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়।
গতকাল শনিবার গণভবনে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ৮টি বিভাগীয় জেলায় ৮টি ল্যাপটপ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ল্যাপটপের অর্থায়ন করেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।