দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ইফতারে হামলার অভিযোগ
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশ হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল শুক্রবার নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় বিএনপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার জিনারদী এলাকায় প্যান্ডেল তৈরির সময় থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ফুটবলার নাদির হত্যা মামলার আসামি আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মী সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় দা, চাপাতি, রামদা দিয়ে প্যান্ডেলে ব্যবহৃত কাপড়, বাঁশ ও চেয়ার-টেবিল কেটে ফেলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘কিন্তু রাতের আঁধারে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালাচ্ছে পুলিশ ও শাসক দলের ক্যাডাররা।’
এ ছাড়া গতকাল ঢাকার দোহার উপজেলায় জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল পুলিশ পণ্ড করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, দোহার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে ইফতার মাহফিলে হামলা চালানো হয়। পুলিশের অনুমতি ছাড়া দোহারে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো যাবে না বলেও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়।
একই দিন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যবার্ষিকী উপলক্ষে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাঁশকান্দি ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলও পুলিশ পণ্ড করে দেয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। অথচ অনুষ্ঠানটি উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রুমানের বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছিল।
ইফতার অনুষ্ঠানের জন্য স্থান বরাদ্দ পেলেও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি আয়োজিত আজকের ইফতার মাহফিলের জন্য পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না বলে জানান রিজভী আহমেদ।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ভোলার তজুমদ্দিনে বিএনপির ইফতার মাহফিলে বাধা দিয়ে তা পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুহিবুল্লাহ নাগর ও সিনিয়র সহ-যুগ্ম সম্পাদক ওমর আসাদকে ইফতার মাহফিল থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতেই যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। এরপর উল্টো পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ডাকাতির মিথ্যা মামলা করেছে। বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক মোদাচ্ছেরসহ ছয়জনকে ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নাটোর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার ইফতার মাহফিলের অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ সেখানে এখনো অনুমতি দিচ্ছে না বলেও জানানো হয়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘রমজান মাসে দেশব্যাপী বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলগুলোতেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও কোথাও সরকারি দলের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুলিশ চড়াও হচ্ছে, আক্রমণ চালাচ্ছে। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তো দূরে থাক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতেও হিংসার আশ্রয় নিয়েছে। সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বাধা এবং হামলা করছে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। এ ধরনের আক্রমণ বা বাধা প্রদান শুধু রাজনৈতিক দলের ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা নয়, বরং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপরও আক্রমণ।’
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকধারীরা তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ ও নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাবেক এজিএস ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ও তাঁর খালাতো ভাই ওয়াজিউল্লাহ লালকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে কোথাও নাহিদ ও ওয়াজিউল্লাহর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। অবিলম্বে নাহিদ ও ওয়াজিউল্লাহকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
জনবিচ্ছিন্ন সরকার জনগণকে বাদ দিয়ে কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় তারই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে এখন তারা ভীত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহারের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিনই খবরের পাতা খুললেই চোখে পড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের খবর। এমনকি সাধারণ লোকদেরও গুলি করে হত্যা করার পর ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসী বানিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানো হচ্ছে। এই নাটক এত বেশি মঞ্চস্থ হয়েছে যে, বন্দুকযুদ্ধের নাটক জনগণ এখন আর বিশ্বাস করে না। জনগণ মনে করে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করার জন্য বন্দুকযুদ্ধের এই নাটক প্রচার করা হয়।’