লুটপাটের টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা : রিজভী
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন তাঁদের দুর্নীতি আর লুটপাটের টাকা সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে পাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, আজকের গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা রাখার পরিমাণ আরো বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জমা হয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে। অথচ সারা দুনিয়া থেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমেছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় বিনিময় করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকায়। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে জমার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল প্রায় চার হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের বছরের চেয়ে এ জমার পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) গতকাল বৃহস্পতিবার ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এসএনবির বার্ষিক এ প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশের অর্থ জমার এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতা রিজভী অভিযোগ করেন, “মূলত দুর্নীতি আর লুটপাটের টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা। গতকাল অর্থমন্ত্রী সংসদে যে বলেছেন, ‘ব্যাংকিংখাত অত্যন্ত নাজুক। লালবাতি জ্বলার উপক্রম হয়েছে।’ সে ব্যাংক লুটের টাকাই সুইস ব্যাংকে পাচার হয়েছে বলে সবাই বিশ্বাস করে। টাকা পাচারের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের লোকেরা জড়িত। তা না হলে অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অসহায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন না। সত্যিকার অর্থে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া সুশাসনের অভাবে বিনিয়োগ পরিবেশের ঘাটতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আরো বাড়ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার জোর করে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। লুটপাটের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব আর্থিক খাত ধ্বংস করে দিয়েছে। যা গতকাল অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে কিছুটা ফুটে উঠেছে। তা ছাড়া বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারি, অগ্রণী ব্যাংক কেলেঙ্কারি, রূপালী ব্যাংক কেলেঙ্কারির মতো বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। অথচ একটিরও বিচার হয়নি বা সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। অবৈধ ভোটারবিহীন সরকার কেলেঙ্কারি ছাড়া জনগণকে আর কিছুই উপহার দিতে পারেনি। এর পেছনে কারা জড়িত, তা সরকার ভালো করেই জানে। জনগণও জানে। কারা সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার করছে, কারা কানাডায় বেগমপল্লী গড়ে তুলেছে, কারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাচ্ছে, তার জবাব জনগণ একদিন দেবে। আর সে জন্যই তাদের জনগণকে এত ভয়। তাই কী করে ভোটছাড়া আরেকটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা যায় সে পৈশাচিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। ভোটারবিহীন সরকারকে জনগণের জবাব দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। জনগণের হাত থেকে পালানো আর সহজ হবে না। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে বলতে চাই, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচারের জন্য দায়ীদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’
অন্ধ হলে কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকে না
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, “আপনারা শুনেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এবারের ঈদ নাকি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ছিল। মন্ত্রী আরো বলেছেন, ঈদে কোনো যানজট ছিল না। যানজট ছিল বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে। আমি মন্ত্রী মহোদয়কে সেই পুরোনো উদ্ধৃতি দিতে চাই, ‘অন্ধ হলে কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকেনা।’ যানজটের যে বিভীষিকাময় প্রলয়ের ধাক্কা ঈদমুখী মানুষকে পোহাতে হয়েছে, মন্ত্রীর বক্তব্য মানুষের সে কষ্টকে উপহাস করা। ক্ষমতার নেশায় মজে ব্যর্থতা ঢাকতে মিথ্যা প্রচারই এখন একমাত্র ভরসা আওয়ামী মন্ত্রীদের। জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে মিথ্যা ও অপপ্রচারকে আরো বেশি কায়েমি দৃঢ়মূল করেছে আওয়ামী নেতারা। যানজটে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের খবর গণমাধ্যমের সব শাখায় ছবিসহ ছাপা হয়েছে। যানজটের শিরোনামাঙ্কৃত সচিত্র সংবাদগুলো কি সড়কমন্ত্রীর চোখে পড়েনি। অতিরিক্ত ক্ষমতাপ্রীতি মানুষকে অন্ধ করে দেয়, মানুষের বুদ্ধিনাশ ঘটায়।”
বিএনপি নেতা বলেন, আসলে চারদিক থেকে ব্যর্থতার অভিযোগে সড়ক মন্ত্রী উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এমনকি নিজেদের সংসদ সদস্যরাও ঈদে তীব্র যানজট ও ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জন্য মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অকর্মন্যতা ও ব্যর্থতার ধারা বর্ষণ করেছেন। সড়ক পরিবহনে অব্যবস্থাপনা, আইন অমান্যের ধারাবাহিক পরিস্থিতিতে ঈদের প্রাক্কালে মানুষের যাতায়াতে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এবার ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ঈদের আনন্দ কারবালার মাতমে পরিণত হয়। রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে যাত্রী পরিবহনে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় এবং অতিরিক্ত যাত্রীকে ট্রেন-বাস ও লঞ্চের ছাদে নিয়ে পরিবহন করায় দুর্ঘটনা দুর্বিষহ মাত্রা লাভ করে। মানুষ দুর্ভোগের অসীম যন্ত্রণার মধ্যে ছটফট করে, অথচ সড়কমন্ত্রী শান্তি ও স্বস্তির বাণী শোনাচ্ছেন জনগণকে। প্রকৃত পক্ষে আওয়ামী লীগ ভ্রান্ত ও অবাঞ্ছিত তথ্য প্রদানকারী ইনস্টিটিউশন। এই ইনস্টিটিউশনের কন্ট্রিবিউশন হচ্ছে অপকর্ম করো আর তা ঢাকতে অপপ্রচার চালাও।’