‘শক্তি প্রয়োগ করে দমন করা যায়, নির্মূল করা যায় না’
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় চালানো হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ শনিবার সকালে সেখানকার অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের মতামত ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ অন্যরা। এ সময় তাঁরা বলেন, সরকার ও প্রশাসনের পাশাপাশি দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি প্লাটফর্মে এসে কাজ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে তাঁদের সন্তানদের প্রতি লক্ষ রাখারও আহ্বান জানান তাঁরা।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমাদের দেশে তো অনেক ঘটনা ঘটে এবং মানুষ ভুলে যায়। কিন্তু এই ঘটনাটা বোধহয় একদিনের জন্যও মানুষ ভোলে নাই। এটি নিয়ে কিন্তু সমাজের নানান স্তরের মানুষ এমনকি তরুণ প্রজন্মও এটা নিয়ে নানা আলোচনা করছে। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে। তবে এই জায়গাটিতে আমাদের নিশ্চিন্ত থাকার কোনো অবকাশ নাই। অত্যন্ত সচেতনতার সাথে আমাদের মনোজগৎ নির্মাণ, আমাদের সামাজিক বিনির্মাণে মনোযোগ দিতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।’
হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলায় নিহত ইশরাত আখন্দের মামা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই দিনটি আমাদের জন্য কত বেদনার। শুধু নিকটাত্মীয়কে হারিয়েছি বলেই নয়, আমাদের বর্ণাঢ্য ইতিহাসের মধ্যে একটা কলঙ্কের তিলক যুক্ত করায়ও। আমি এখানে নিহত সবার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।’
জঙ্গি নির্মূল করতে হলে বাহাত্তরের সংবিধানের মতো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে বলে মনে করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর। তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজান হামলার পর পুলিশ তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশি অভিযানে অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, এরা সাধারণ অপরাধী নয়। এদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের একটা দর্শন আছে, রাজনীতি আছে। আমরা কিন্তু রাজনৈতিকভাবে, আদর্শিকভাবে, দার্শনিকভাবে সন্ত্রাসকে মোকাবিলা করছি।’
শাহরিয়ার কবীর আরো বলেন, ‘এই সন্ত্রাসের মূল হচ্ছে জামায়াতের দর্শন, মওদুদীবাদী দর্শন, ওয়াবিবাদী দর্শন, সালাফীবাদী দর্শন, যেটা আইএস করছে, আল-কায়েদা করছে। বিশ্বব্যাপী এরা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের সব সরকারেই শক্তি চালিয়ে দমন করছেন কিন্তু শক্তি প্রয়োগ করে দমন করা যায়, নির্মূল করা যায় না।’
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা আজ ব্যথিত, মর্মাহত ও একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ। ধর্মের নামে সেদিন মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখন সরকারের উচিত একটি সুচিন্তিত কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের অপশক্তিকে মোকাবিলায় জনতা ও রাজনীতির এক সম্মিলিত রাজনৈতিক ঐক্য দরকার।’