বিচ্ছিন্ন বান্দরবানে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনে বান্দরবানে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তিনদিন ধরে বন্ধ আছে বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ।
urgentPhoto
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে রুমা, থানছি, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মানুষ। বন্যার পানিতে সড়ক ও বেইলি ব্রিজ ডুবে যাওয়ায় বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কেও তিনদিন ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় বান্দরবানে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে জেলা সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, থানছি ও আলীকদম উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে আজ সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত থেমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার কয়েকশ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা ৭০টি আশ্রয় কেন্দ্রে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে খোলা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
অব্যাহত বর্ষণে জেলা সদরের বনরুপাপাড়া, হাফেজঘোনা, পুলপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে বান্দরবানে গত কয়েক দিনে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ কামাল ও শামসুল আলম জানান, পাহাড় ধসে রুমা, থানছি সড়কে মাটি জমে যাওয়ায় দুইদিন ধরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
এদিকে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের পশ্চিম বরদুয়ারা এলাকায় প্রধান সড়কে বন্যার পানি জমে যাওয়ায় সারা দেশের সঙ্গে বান্দরবানের তৃতীয় দিনের মতো সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মানুষও।
বন্যার পানিতে সড়ক ও বেইলি ব্রিজ ডুবে যাওয়ায় বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কেও তিনদিন ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী হতদরিদ্র মানুষদের ১৫টি ঘরবাড়ি বন্যার পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে নদী তীরবর্তীরা মানুষরা।
আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া বন্যা দুর্গত খতিজা কেগম, ছলিমুল্লাহ ও মোহাম্মদ আলী বলেন, বৃষ্টিতে বন্যায় ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। তিনদিন ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে কষ্টে জীবনযাপন করছেন তাঁরা। কোনো খাবার ও ত্রাণ পাননি। খাবার পানি পাওয়াও কষ্ট। কেবল সেনাবাহিনী ওষুধ ও সামান্য খাবার দিয়েছে।
বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জাবেদ রেজা জানান, বন্যা ও পাহাড় ধসে বান্দরবান পৌর এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নানা প্রতিকূলতায় ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া সম্ভব হয়নি। আজ দুপুর থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া বন্যা দুর্গতদের মধ্যে খাবার সামগ্রী ও ত্রাণ তৎপরতা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বান্দরবানের জন্য ১২৫ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য এবং দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য প্রতিটি উপজেলায় ৩৫ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য এবং ৭০ হাজার টাকা করে পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে।
আবু জাফর আরো জানান, এরই মধ্যে জেলায় দুই হাজার ৬৮৬ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্গতদের তালিকা তৈরি করে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করা হবে।