সদস্যপদ বাতিলের এখতিয়ার নেই আ.লীগের : লতিফ
দলের সদস্যপদ বাতিলের কোনো এখতিয়ার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের নেই বলে দাবি করেছেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আজ রোববার নির্বাচন কমিশনে পাঠানো এক লিখিত বক্তব্যে এ দাবি করেন তিনি। চিঠিতে সইয়ের নিচে নিজেকে টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কূটনৈতিক সফরকালে ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বসবাসরত টাঙ্গাইলের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে আমার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কষ্টকল্পিত, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আলোচনার স্বার্থে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে আমি উপরোক্ত বক্তব্য দিয়েছি, তাহলেও তা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে আমার সদস্যপদ বাতিল করার কোনো এখতিয়ার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের নেই।’
‘কেননা, আমি বাংলাদেশ সরকারের তথা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে গিয়েছি এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে উক্ত বক্তব্য রেখেছি বলে ধরে নেওয়া হবে। আমি আওয়ামী লীগের একজন সদস্য হিসেবে সেই বক্তব্য দিয়েছি বলে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। অতএব, আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে আমাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণ ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে বিধায় সে সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তীকালে যত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং হবে, তা-ও ভুল বলে আইন অনুযায়ী বিবেচনা করা হবে,’ যোগ করেন সাবেক মন্ত্রী।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পাঠানো সারমর্মের সঙ্গে লতিফ সিদ্দিকী তাঁর বিষয়টি সংগতিপূর্ণ নয় বলে দাবি করেন। লিখিত বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে এ বিষয়টি স্পষ্ট, মাননীয় স্পিকার কর্তৃক প্রেরিত ও উল্লিখিত সংবিধানের ৬৬(৪) দফায় বর্ণিত সারমর্মের সঙ্গে আমার বিষয় ও বিতর্কটি সংগতিপূর্ণ নয়। ফলে মাননীয় নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে ৬৬(৪) দফার বিষয়ে যা বলার এবং কার্যক্ষেত্রে ৬৬(২) ও ৭০ ধারার কোনো ব্যত্যয় না ঘটায়, কোনো কিছু করণীয় আছে বলে মনে হয় না।’
লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনকে শুনানি বিতর্কে না জড়াতেও অনুরোধ করেছেন সাবেক এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সমীপে বিনীত নিবেদন, বিষয়টির গভীরতা ও ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রাখতে অনুরোধ করছি। তাই নির্বাচন কমিশন শুনানি বিতর্কে না জড়িয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার বরাবর ফেরত পাঠালে বাধিত হব।’
এর আগে ধর্মানুভূতিতে চরম আঘাত দেওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে দলের গঠনতন্ত্রের ৪৬(ক) ও (ঞ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে কেন তাঁকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়েও লতিফ সিদ্দিকীকে নোটিশ দেয় আওয়ামী লীগ। তবে এ বিষয়ে লতিফ সিদ্দিকীর জবাব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তাঁকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।
লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি লিখিতভাবে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানায় দলটি। স্পিকার সেই চিঠি আবার পাঠান নির্বাচন কমিশনের অবগতির জন্য। নির্বাচন কমিশন এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা চেয়ে আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীকে আলাদাভাবে চিঠি দেয়।
আজ সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ব্যাখ্যা লিখিতভাবে কমিশনে জমা দেন এই সংসদ সদস্য। এ ছাড়া তাঁকে বহিষ্কারের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে নিজেদের ব্যাখ্যাও জমাও দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সময় নির্ধারণ করে দুই পক্ষকে নির্বাচন কমিশন ডাকা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে নিজেদের বক্তব্য জমা দেওয়ার পর সচিব তাঁদের এ কথা জানিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান তিনি।