ওমানে গিয়ে দুই যুবক নিখোঁজ
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার রামদিয়া গ্রামের সালমা বেগম ছালী (৩০) নামের এক মানবপাচারকারীর খপ্পরে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন দুই যুবক। আর হোটেলে আটকে রেখে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরেছেন জামাই ও শাশুড়ি। এ ঘটনায় সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে নিখোঁজদের উদ্ধার ও মানবপাচারকারী ওই নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের দুর্দশার কথাও বর্ণনা করেন তাঁরা।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার রৌহাদহ গ্রামের আকেন মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন (৩৩) ও বরংগাখোলা গ্রামের এস এম সোহেলের ছেলে আশরাফুল হক আশিস (২২)। আর দেশে ফেরা দুজন হলেন ঘিওর উপজেলার কড়চাবাদা গ্রামের ফজল মিয়ার স্ত্রী রুশিয়া বেগম (৪৫) ও তাঁর মেয়েজামাই হরিরামপুর উপজেলার সোনাকান্দর গ্রামের মাইনুল ইসলাম (২২)।
রৌহাদহ গ্রামে জাকিরের স্ত্রী মুক্তা আক্তার এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁদের সংসারে দুই ছেলে। ওমানে সুপারশপে চাকরির জন্য সালমা বেগমকে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়। পাঁচ মাস আগে জাকির ওমান চলে যান। সেখানে গেলে তাঁকে সুপারশপে চাকরি তো দেওয়া হয়নি, উপরন্তু সর্বশেষ দেড় মাস আগে জাকির বাড়িতে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। এর পর জাকিরের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আশিসের বাবা এস এম সোহেল জানান, দুই ছেলের মধ্যে আশিস বড়। ওই সালমা বেগম চার লাখ টাকা নেন ওমানে সুপারশপে চাকরি দেওয়ার কথা বলে। এক বছর আগে আশিস ওমানে চলে যান। ছয় মাস আগে ফোনে একবার আশিস তাকে বলছিল, ‘বাবা, আমাকে বাঁচাও, আমি খুব কষ্টে আছি।’ এর পর থেকে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি আশিসের সঙ্গে।
রুশিয়া বেগম জানান, সালমা বেগম তাঁর কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেন ওমানে বাড়ির কাজের ভিসা দেওয়ার জন্য। এক বছর আগে তিনি চলে যান ওমানে। সেখানে নেওয়ার পর তাঁকে বাড়ির কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। হোটেলে দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার হন তিনি। পরে বাড়ি থেকে প্লেনের টিকেট কাটার টাকা পাঠালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। মানবপাচারকারী চক্রের শাস্তি দাবি করেন রুশিয়া।
রুশিয়ার মেয়ের স্বামী মো. মাইনুল ইসলাম জানান, তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তাঁর এক মেয়েও রয়েছে। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তিনি চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল ওমান চলে যান। এ জন্য সালমা বেগমকে দিতে হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। সুপারশপের চাকরির কথা বলা হলেও সেখানে গিয়ে তিনি কোনো কাজই করতে পারেননি। তাঁকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। যেখানে তিনি আটকে ছিলেন, সেখানে আরো নানা বয়সী বাংলাদেশি লোকজন ছিল। নানাভাবে চেষ্টার পর গত মঙ্গলবার তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময় সালমা বেগম ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে খোঁজাখুঁজি করছেন তাঁরা। তবে তাঁর কোনো হদিস মেলেনি। সালমার স্বামী হাসান পাচারের সঙ্গে জড়িত। হাসান ওমানে থাকেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে নাম-ঠিকানা পর্যবেক্ষণ ও খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় কাগজ ব্যবস্থা করে হাইকমিশনে পাঠানো হবে। আর অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।