৫ বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে
আগামীতে দেশে যাতে কোনো রাজনৈতিক সংঘাত তৈরি না হয় সেজন্য পাঁচ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কি এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
এর কারণ হিসেবে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ওই জাতীয় সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে সংঘাত করে। আর এর ফল ভোগ করে দেশের জনগণ। তাই আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এমন লোক দেশের নেতৃত্বে থাকবে যারা দেশের জন্য, জনগণের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য কাজ করবে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে বিকল্পধারা বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বি. চৌধুরী এসব কথা বলেন।
সরকারের উদ্দেশে বি. চৌধুরী বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আপনি ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করবেন, অথবা খুলনা মার্কা নির্বাচন করবেন সেটি হবে না। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
সরকারের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বন্ধুকযুদ্ধের সমালোচনা করে ইফতার মাহফিলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, তারা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমাদের টাকায় অস্ত্র কিনে আমাদের জনগণকে বিনাবিচারে হত্যা করছে। অথচ আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি না নিয়ে, কোনো বিচার না করে আমাদের জনগণকে খুন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে আ স ম আবদুর রব বলেন, যেতে তো সবাইকে হবে। তবে আইয়ুব, ইয়াহিয়া খানের মতো চলে যাওয়া কখনো কারো জন্য কাম্য না। আমরা চাই, আপনি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিন। না হলে জনগণের জোয়ারে এমনভাবে বিদায় নিবেন যেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিষয়ে জেএসডি সভাপতি বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখার ফলাফল কোনোভাবে ভালো হবে না। আমরা চাই আপনি ভালোভাবে বিদায় নিন। কারণ আইয়ুব, ইয়াহিয়া খানের মতো বিদায় নিন, সেটা আমরা চাই না।
বন্দুকযুদ্ধের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের নামে যেভাবে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে আসলে এটা একটি মৃত্যুর মিছিল। এখন পর্যন্ত বিনা বিচারে ১১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এমন মৃত্যুর মিছিল পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।’
মান্না বলেন, তারা বলছে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, যে যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ যুদ্ধ হচ্ছে নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ।
খালদো জিয়ার মুক্তি দাবি করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘আমি কোনো দ্বিধা না রেখে বলব বিনা শর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। তাঁকে এভাবে আটকে রাখার কোনো অধিকার সরকারের নেই।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের আহ্বানে সমর্থন জানিয়ে মান্না বলেন, ‘আপনাদের সাথে এক সাথে যুদ্ধ করব। তারপর আপনারা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন, এরপর আমাদের আর চিনবেন না, এটা হলে আমরা নাই। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। তাই এ বিষয়টা খোলাখুলি বলে রাখলাম। এটা বিবেচনায় রাখবেন।’
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে বিকল্পধারা বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : স্টার মেইল
ইফতার মাহফিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ জাতির সামনে যে সংকট, এটি কোনো একক দল বা ব্যক্তির নয়। এ সংকট গোটা জাতির। আমাদের ওপর আজ যে দানব বসে আছে তাকে পরাজিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে সবাই আসুন এক সাথে কাজ করি। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করি।
ইফতার মাহফিলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মানুষ যখন ভয় পায়, তখন উল্টাপাল্টা কাজ করতে থাকে। আওয়ামী লীগও একই কাজ করছে। তারা মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিনাবিচারে মানুষ খুন করছে। মাদকের আসল হোতাকে না ধরে যারা পেটের দায়ে মাদক বহন করে তাদের বিনাবিচারে হত্যা করছে।
বিএনপির সাবেক নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আপনার সাথে যা কিছু হয়েছে সে সব ভুলে যাবেন। একই সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে এক সাথে কাজ করবেন। কারণ ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন রাজনীতি কীভাবে করতে হয়।
ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ।