সম্পাদক পরিষদকে দেওয়া ওয়াদা ভঙ্গ করিনি : তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদকে দেওয়া ওয়াদা থেকে সরে আসিনি। আমরা এখনো তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই যে সংসদে ফের আইন সংশোধন করা যায় না, বিষয়টি এমন নয়।’
আজ রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাসানুল হক ইনু এ কথা বলেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ তথ্যমন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সম্প্রতি পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগের কথা ও আইনটির বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। জাতীয় সংসদে আইনটি পাসের পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর একটি রুটিন ওয়ার্ক মাত্র। যেকোনো সময় আইন সংশোধনের এখতিয়ার জাতীয় সংসদ রাখে। সময় তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আমরা তিন মন্ত্রী ওয়াদা ভঙ্গ করেছি- এ ধরনের অভিযোগ এখনই করা ঠিক না।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সম্পাদক পরিষদকে তিন মন্ত্রীর দেওয়া ওয়াদা ভঙ্গ করা হয়েছে’ মর্মে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এটা বড়ই হৃদয়বিদারক। সম্পাদকদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে এবং সামনেও চলবে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সে সময় ৩ অক্টোবরের বৈঠকে আপত্তিগুলো উত্থাপন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি জানিয়েছিলেন ওই তিন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা। কিন্তু পরে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন না করেই আইনটি সংসদে পাস হয়।
এ বিষয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন সম্পাদক পরিষদের নেতারা। তাঁরা বলেন, সম্পাদক পরিষদকে তিনজন মন্ত্রী যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমরা মনে করি এটি সেই প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। সাংবাদিকদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলো, বিশেষত সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতাবিষয়ক ধারাগুলোতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছাড়াই, আইনটি সংসদে পাস করা হয়। বরং শেষ মুহূর্তে এমন কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলে সংবাদপত্রের কার্যালয় এবং সংবাদ প্রতিষ্ঠানের দপ্তরে প্রবেশ করা, তল্লাশি করা, বন্ধ করে দেওয়া, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক জব্দ করা, এমনকি পরোয়ানা ছাড়াই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে পুলিশের ক্ষমতা আরো বেড়েছে।
তাদের এই অভিযোগের সূত্র ধরেই আজ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।
এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের দাবিতে আগামীকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে সম্পাদক পরিষদ। এ ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালীন তাদের সঙ্গে আলোচনা চলবে কীভাবে, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কর্মসূচি আলোচনার পথে অন্তরায় হতে পারে না।’
এদিকে, বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে, তাতে যোগ না দেওয়ায় বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে স্বাগত জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের একদিনের মাথায় গণমাধ্যমকে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বি. চৌধুরী যা বিশ্বাস করেন, সেই বিশ্বাসে অনড় ছিলেন এবং আছেন। এ কারণেই তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাননি। এ জন্য তাঁকে সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানাই।’