নির্বাচনে জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই : বিএনপি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের আসনে নির্বাচন স্থগিত অথবা প্রার্তিতা পরিবর্তনের সুযোগ চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বলেন, তারা (জামায়াত নেতা) শুধু ধানের শীষের প্রতীক নয়, তারা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী। বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন করছেন তারা। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ তাদের দেওয়া হয়েছে। জামায়াত তাদের মনোনীত করেনি। বিএনপি মনোনীত করেছে।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া জামায়াতের নেতাদের পদপদবি তাদের দলীয় ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ওয়েবসাইটে পদ-পদবি থাকুক। আপনারাও যদি আমাদের কাছে মনোনয়ন চান, আমরা দিতে পারি। কোনো ওয়েবসাইটে আপনার নাম কীভাবে আছে সেটা পরের ব্যাপার। আমরা আইনের মাধ্যমে দিতে পারি কিনা সেটা হলো বিষয়। জামায়াত কোনো নিবন্ধিত দল নয়। কারা কারা জামায়াত করে সেই তালিকাও আমাদের কাছে নাই। আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তারা আমাদের দলের প্রতীক ধানের শীষ পেয়েছে। এটা যদি অবৈধ হতো তাহলে নির্বাচন কমিশন আগেই বলত- তাদের প্রার্থিতা অবৈধ। তাদের যদি প্রতীক দেওয়া বেআইনি হতো, তাহলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কেন প্রতীক বরাদ্দ করল? আওয়ামী লীগ সব সময় বলে, নির্বাচন কমিশন যা করে তাই আমরা মেনে নিব, বাধা সৃষ্টি করব না। এখন কেন আওয়ামী লীগ ইসির কাজে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এখন পর্যন্ত আদালত বিএনপির ১২ থেকে ১৪ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এসব আসনের নির্বাচন স্থগিত রেখে আবার নির্বাচনের দাবি করছি। অথবা এসব আসনে আমাদের প্রার্থী পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বৈধতা দেওয়ার কারণেই তাদেরকে আমরা মনোনীত করেছি। কমিশন যদি সেই সময় অবৈধ ঘোষণা করত আমরা অন্য প্রার্থী দিতাম।
সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি, হামলা, ধরপাকড়, মামলা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, একদিকে আদালত পরিকল্পিতভাবে প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করছে, অন্যদিকে বৈধ প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, বরিশাল-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী শিরিন আক্তারকে গতকাল মারধর করে পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বরিশাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আজ শনিবার পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। সেখানে তাঁকে দেখতে যাওয়া আট-দশজন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। এছাড়া নরসিংদীর মনোহরদীতে আজ দুপুরে বিএনপির প্রার্থী সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের নির্বাচন প্রচারণায় আওয়ামী লীগের লোকজনের হামলায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পুলিশী উপস্থিতিতে সেখাতে হামলা হলেও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করে বরং বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। নরসিংদী-৩ আসনের মনজুর এলাহীর মিছিলেও আওয়ামী লীগ হামলা করেছে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা নির্বাচন করার আগে চাকরি ছেড়ে দিলেও তাঁর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু একই নির্বাচনী এলাকায় একজন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা-১৭ এর গুলশান এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভিনেতা ফারুক (আকবর হোসেন পাঠান) ঋণ খেলাপি হলেও তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়নি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, গণতন্ত্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জিত অধিকার। আর গণতন্ত্রের বাহন হলো নির্বাচন। সেই নির্বাচন যদি এভাবে প্রহসনে পরিণত হয়, হাস্যকর করা হয়। তাহলে এর দায়দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালে ইসি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু তারা কেন সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করছে না, নিশ্চয় জনগণ সেটা জানতে চাইবে। আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করছি আমাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেওয়া হোক। কারণ এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার তাদের দেশে আসতে বাধা দিচ্ছে। তাদের ভিসা না দিলে তারা কীভাবে আসবেন। কারণ সরকার নির্বাচনের নামে যে কাজটি করতে চাচ্ছে সেটি হলো চুরিচামারি। আর এই কাজে বাধা হতে পারেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। এ কারণেই তারা বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে দিতে চাচ্ছে না।