প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য সত্যের অপলাপ : বিএনপি
বিএনপি গুপ্তহত্যা শুরু করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন তাকে ‘সত্যের অপলাপ’ বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। এ ধরনের মন্তব্য নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সত্য উদঘাটনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছে দলটি।
আজ সোমবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ কথা বলেন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপি বরাবরই গণতান্ত্রিক রাজনীতি করে। তারা হত্যা ও খুনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। তারপরও সরকার প্রধান যখন বলেন, ‘গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে বিএনপি’ তখন তা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়। এ ধরনের মন্তব্য নিরপেক্ষ তদন্ত ও সত্য উদঘাটনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা এ ধরনের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও বিরোধিতা করছি। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতি এ ধরনের মন্তব্য অনভিপ্রেত এবং যা অপরাজনীতির বীজকে আরো গভীরে প্রোথিত করবে।’
জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফের মন্তব্যের সমালোচনা করেন রিপন। তিনি বলেন, ‘ শাসক দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফের মন্তব্যে গোটা জাতি স্তম্ভিত, বিস্মিত। পুত্রহারা অধ্যাপক সাহেব দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে লালিত আইন শৃঙ্খলাহীন পরিস্থিতিতে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, কিছুদিন আগে খুনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. অজয় রায়ের পুত্র অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে গতরাতে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।’
‘কোন পরিস্থিতিতে পুত্রহারা পিতা, স্বামীহারা স্ত্রী এমন মন্তব্য করতে পারেন-তা বোঝার জন্য যে সংবেদনশীল মন থাকতে হয়-তা আজ শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে লোপ পেয়েছে। তাদের বক্তব্য বিবৃতি শুধু রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূতই নয়, সামাজিক শিষ্টাচারেরও পরিপন্থী।’
বিনা ভোটে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে অভিযোগ করে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘এ সরকারের সহযোগীরা ক্ষমতার দম্ভে ক্রমেই বেসামাল হয়ে পড়েছেন। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় একের পর এক ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন-নিপীড়নের উদ্দেশ্যে ক্রমাগতভাবে বিরোধী দলকে অরাজনৈতিক ভাষায় আক্রমণ করে প্রকৃত সমস্যাকে আড়াল করার ব্যর্থ অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, ‘মাহবুব-উল-আলম হানিফ নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে তাঁর মন্তব্যে সারা দেশে ঘৃণার উদ্রেক হয়েছে। অবশেষে তিনি তাঁর বক্তব্যে দুঃখ প্রকাশ করলেও এর সমাপ্তি ঘটবে না বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করব তিনি এ জন্য দীপনের বাবার কাছে এবং অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যার কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।’
সরকার সব হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত করবে বলে আশা প্রকাশ করে রিপন বলেন, ‘তবে তা না করে শাসক দলের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপিকে অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ঘায়েলের অপচেষ্টা-দূরভিসন্ধি থেকে তারা দূরে সরে না এলে প্রকৃত খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।’
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছে মানুষ পরিশীলিত বক্তব্য এবং প্রতিপক্ষের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ প্রত্যাশা করে মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এর বাইরে যখন অন্য কিছু ঘটে তা মানুষকে আরো হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। রাজনীতি ও রাজনীতিকদের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা এতে আরো কমে যতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করি। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক নেতাদের আরো সংবেদনশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
সবশেষে ড. রিপন বলেন, ‘একের পর এক খুনের ঘটনায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আতঙ্কে পুরো দেশ। এ পরিস্থিতি উত্তরণে কাল বিলম্ব না করে সর্বদলীয় বৈঠকের দাবি আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি।’