জামায়াত নেতা সাঈদীসহ ১০৪ জনের বিচার শুরু
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন হত্যা মামলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ১০৪ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ এনায়েত কবির জামায়াত নেতা সাঈদীসহ ৫৭ আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয়। উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত অভিযোগ গঠন করেন। পরবর্তী তারিখ থেকে চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে ক্যাম্পাসের এসএম হলের পাশের ম্যানহোলের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় জামায়াত-শিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকালে পুলিশ জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীসহ ১১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের জুলাই মাসে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামিদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে আরো চার আসামি মারা গেছে। তাই মৃত ছয়জনকে বাদ দিয়ে ১০৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এদের মধ্যে অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় ৫৭ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার অন্য ৪৭ আসামি পলাতক রয়েছেন।
আদালতে উপস্থিত আসামিদের মধ্যে সাঈদী ছাড়া অন্যরা কাঁঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বয়স বিবেচনায় সাঈদীকে কাঁঠগড়ার বাইরে এজলাস কক্ষে একটি হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়। শুনানি ও অভিযোগ গঠন শেষে সাঈদীকে আদালত থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগ গঠন শেষে বাদীপক্ষের আইনজীবী শিরাজি শওকত সালেহীন এলেন জানান, মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় আসামিদের কাছে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তখন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বলেছেন, রাবি ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেনও না। তিনি আদালতের কাছে সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করেন।
মামলার অভিযোগপত্রের বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট শিরাজি শওকত সালেহীন এলেনের দাবি, ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যার আগে ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের তৎকালীন শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াত নেতারা রাজশাহীতে ছাত্রশিবির নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। সেখানে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য ধরে রাখতে ছাত্রলীগের মধ্য থেকে একজনতে খুন করতে শিবির নেতাদের নির্দেশনা দেন। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ছাত্রশিবির নেতারা ফারুককে খুন করে ক্যাম্পাসের এসএম হলের পাশের ম্যানহোলে লাশ ফেলে রাখে। তাই দেলাওয়ার হোসাইন বিরুদ্ধে প্ররোচণা দেওয়ার ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাঈদীর সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী।
অভিযোগের শুনানির সময় আসামিপক্ষে ১০ জন আইনজীবী ছিলেন। তাঁদের নেতৃত্ব দেন অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। আদালতে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর দুই ছেলেও উপস্থিত ছিলেন।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন জানান, ফারুক হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের দিন রাজশাহীর আদালতে হাজির করার জন্য গত শনিবার গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে রাজশাহীতে আনা হয়। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁকে আবারও কাশিমপুরে কারাগারে ফেরত পাঠানো হবে।
সাঈদীকে আদালতে তোলাকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকেই রাজশাহীর আদালত চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বৃহস্পতিবার পুরো আদালত চত্বরকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিপুল পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) ও র্যাব সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। আদালত চত্বরের সব প্রবেশমুখে তল্লাশি ছাড়া কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।