সাত বছরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ৬১৮, বাস্তবায়ন ৫২
গত সাত বছরে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কাজগুলোর মধ্যে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী ৬১৮টি প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে গত সাত বছরে মাত্র ৫২টি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে।
আজ বুধবার দশম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো আবদুল ওদুদের প্রশ্নের জবাবে সংসদকে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী।
আবদুল ওদুদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘২০০৮ সালে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন জেলা সফরকালে জনসভা মঞ্চে যে সব উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি আপনি দিয়েছেন এই পর্যন্ত তার কতগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে এবং যেগুলো এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি সেগুলো কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করা হবে?’
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এ পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন জেলা সফরের সময় আমি সর্বমোট ৬১৮টি প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা প্রদান করি। ইতোমধ্যে ৫২টি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে। ২৮৫টি বাস্তবায়নাধীন আছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২৮১টি প্রতিশ্রুতি। যার মধ্যে ১০৬টি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে ডিপিপি অনুমোদিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে।’
প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ পুরস্কার প্রসঙ্গে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে অংশগ্রহণকালে আমাকে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) নির্বাহী পরিচালক অ্যাচিম স্টেইনার এই সম্মানজনক পুরস্কারটি আমার হাতে তুলে দেন। এই পুরস্কারটি আমি বাংলাদেশের সকল মানুষকে উৎসর্গ করি। কারণ আমি মনে করি আমরা বাংলাদেশের জনগণের সহায়তা নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়নস অব দি আর্থ পুরস্কার প্রবর্তন করে। এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০০৫ সাল থেকে এই পুরস্কারটি সমগ্র বিশ্বের সেই সব দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ এবং সংগঠনগুলোকে দেওয়া হচ্ছে, যারা উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং মানবজাতির মর্যাদাপূর্ণ জীবনের জন্য দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন।
এ ছাড়া সাবেক ছিটমহলবাসীদের পুনর্বাসন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের ব্যাপারে ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাবেক ছিটমহলের বাসিদের পুনর্বাসন এবং তাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থ বিভাগের বাজেটে প্রতীকী বরাদ্দ হিসেবে ছিটমহলের উন্নয়নের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী এই অর্থ ছাড় করা হবে। সাবেক ছিটমহলবাসীদের বাংলাদেশের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক গৃহীত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হবে এবং প্রয়োজনের নিরিখে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
সাবেক ছিটমহলের উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে সংসদে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এলজিইডির আওতায় ১৯১ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ২৩ কিলোমিটার মাটির সড়ক, ৭১১ কিলোমিটার ব্রিজ, ১৫টি মসজিদ, আটটি কমিউনিটি সেন্টার, সাতটি মন্দির এবং আটটি ঘাট নির্মাণ, ১২টি হাটবাজার, চারটি কবরস্থান এবং তিনটি শ্মশানঘাট উন্নয়ন, প্রায় ১১ কিলোমিটার খাল খনন ও ২৩০ মি. স্লোপ প্রোটেকশন অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৫টি ব্যয়সংবলিত একটি ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে।
এ ছাড়া ছিটমহলবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে ছিটমহলগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ছিটমহলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনপূর্বক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পঞ্চগড় জেলায় একটি নতুন থানা ও তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ছিটমহলের এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে এসব এলাকার স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ছিটমহলবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দিবা ও রাত্রিকালীন পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ছিটমহলবাসীরদের নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এরই মধ্যে জেলাভিত্তিক বরাদ্দ করা কোটার অতিরিক্ত বরাদ্দের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে ৮৮তম ব্যাচে সিপাহি (জিডি) পদে ভর্তির ক্ষেত্রে ছিটমহলবাসীদের জন্য অতিরিক্ত ৫০টি কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবিতে সিপাহি পদে এইচএসসি পাস প্রার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। কিন্তু ছিটমহলবাসীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে এইচএসসির স্থলে এসএসসি পাস প্রার্থী ভর্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।