বাবার দেখা পেলেন না হুম্মাম
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তাঁর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী আজ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আইনজীবীদের নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে যান। এ সময় তিনি আইনজীবীদের নিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করার আবেদন জানান কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু তাঁকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। urgentPhoto
পরে হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন গতকাল আমরা পরিবারের সদস্যরা বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। ওনার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে।
আমরা বেশি সময় পাইনি ওনার সঙ্গে কথা বলার জন্য। তবে যখন দেখা করলাম, আমরা জিজ্ঞেস করেছি তাঁর কোনো চিন্তাধারা আছে কি না আপনারা যেটা জানতে চান; মার্সি পিটিশন (রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা) নিয়ে। উনি আমাদের সরাসরি বললেন, যেহেতু এটা একটা লিগ্যাল বিষয় এটা উনি ওনার আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে ওনার সিদ্ধান্ত বা ওনার যে চিন্তা আছে সেগুলো ওনার আইনজীবীদের বলতে চান। ওই কারণে আজ দুপুর থেকে আমাদের আইনজীবী এখানে একটা আবেদন করেছিল দেখা করার জন্য। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওনাকে (আইনজীবী) এখানে বসিয়ে রাখা হলো, পরে আমরা নিউজে দেখলাম বোধ হয়, দেখা করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য আমাদের আইনজীবীও চলে আসল।’
হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু আমার বাবা একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন আর ওই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমরাও জানি না। এ জন্য আমরাও চলে এসেছি। অন্তত এ সুযোগটা নেওয়ার জন্য যে উনি কী চিন্তা করছেন। ওনার সিদ্ধান্ত কী হতে পারে। আমাদেরকেও ওই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না দেখা করার জন্য। আশা করি কাল এ সুযোগটা নিতে পারব।’
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ক্ষমা চাইবেন কি না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হুম্মাম বলেন, ‘ওই ব্যাপারে আমরাও জানি না। বারবার নিউজে বলা হচ্ছে যে দেখা হয়েছে জেলার সাহেবের সঙ্গে অথবা অন্য কারো সঙ্গে। আপনারাই বলেন কীভাবে সঠিক তথ্যটা পেতে পারি। কারণ প্রত্যেকটা চ্যানেলে ভিন্ন ভিন্নভাবে তথ্য দেওয়া হয়েছে।’
‘দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আমরা কোর্টে কোর্টে ঘুরেছি। তবে আমি আইনজীবী না। ওনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কিছু পরামর্শও তো ওনার নেওয়া দরকার। এটা হয়তো বা ওনার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত।
আশা করি যে ওনাকে ওই সুযোগটা দেওয়া হবে যে উনি ওনার আইনজীবীদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারবেন যে এ সিদ্ধান্তটা কি ঠিক হবে কি হবে না। আশা করি কালও আমরা একটা আবেদন দিব।
আমাদের আইনজীবীরা ওনার সঙ্গে দেখার করার একটা চান্স নেবে। যদি দেখা করতে পারে, তবে আপনারাও (সাংবাদিক) জানতে পারবেন উনি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
জেল কর্তৃপক্ষ দেখা করার ব্যাপারে কী জানিয়েছে জানতে চাইলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি না। কারো কাছে গিয়ে যে আমরা অ্যাপ্রোচ করব আমরা একটি অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে এসেছি দেখা করার জন্য, সেই সুযোগ পাচ্ছি না। গতকাল যখন আমরা দেখা করেছিলাম তখন আব্বা নিজেই বললেন, আমি আইনজীবীদের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলতে চাই। তখন আমাদের কারা কর্তৃপক্ষ থেকেই বলা হলো যদি আইনজীবীরা ডেপুটি জেলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাহলে ওনারা দেখা করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই কিছু বুঝতে পারছি না। আশা করি আপনাদের (সাংবাদিক) কাছ থেকে কিছু তথ্য আমরা পাব।’
এর আগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান এনটিভি অনলাইনকে জানান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। ওই সময় কারা সুপার নেই বলে জানিয়ে তাঁর আবেদন গ্রহণ করেনি। তাঁকে পরে আসতে বলা হয়। পরে দুপুর ১২টায় ও বিকেল ৪টায় দুই দফায় তিনি আবেদন জমা দিতে গেলে কারা কর্তৃপক্ষ আবেদন গ্রহণ করেনি। তাঁকে জানানো হয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার আইনি প্রক্রিয়া সব শেষ। কারাবিধি অনুযায়ী তিনি এখন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।
এর আগে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর এনটিভি অনলাইনকে জানান, আজ সকালে দেখা করার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন পাঁচজন আইনজীবী। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া যায়নি।
গত ১৮ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ দুজনের রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে এ রায় দেন। এরপর গতকাল ১৯ নভেম্বর পরিবারের সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সন্ধ্যায় তাঁদের দুজনকে রায় পড়ে শোনানো হয়।
এদিকে, রায় কার্যকরকে কেন্দ্র করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।