পরিবারের সঙ্গে সাকা চৌধুরীর শেষ কথা
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাননি বলে দাবি করছে তাঁর পরিবার। অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, সাকা চৌধুরী প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন, এমন প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে।
গতকাল শনিবার সাকা চৌধুরীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের আগে শেষবারের মতো তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান পরিবারের সদস্যরা। রাত সাড়ে ৯টায় সাকা চৌধুরীর স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। এ সময় প্রায় ২০ মিনিট পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান তিনি।
বাবার সঙ্গে শেষ কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, “বাবা বলেছেন, তিনি প্রাণভিক্ষা চাননি। আমি বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বাবা তুমি কি প্রাণভিক্ষা চেয়েছো? তখন বাবা বলেন, ‘কে বলেছে এসব ফালতু কথা? তোমার বাবা কখনো মাথা নত করার মানুষ নন। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি তোমার বাবা, কারো কাছে মাথা নত করে না। তোমার বাবা প্রাণভিক্ষা চাইবে তুমি বিশ্বাস করলে কীভাবে? আমি তো এখন নাই। আওয়ামী লীগ কত কাগজ বের করবে। আমাকে জীবনে কখনো হারাতে না পেরে আমার জান নিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে আওয়ামী লীগ’।”
হুম্মাম কাদের চৌধুরী আরো বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে আমরা দুই ভাই বাবাকে জড়িয়ে যখন কান্না করছিলাম তখন বাবা আমাদের বলেন, ‘তোমরা অনেক ভাগ্যবান যে দেশের এমন পরিস্থিতিতে অনেকে খুন-গুম হচ্ছে। অনেকে আপনজনের মরদেহ খুঁজে পাচ্ছে না। তোমরা ভাগ্যবান যে সম্মানের সঙ্গে আমাকে দাফন করতে পারবে’।”
হুম্মাম বলেন, ‘বাবা আমাকে বলেন, তোমার মাকে দেখো হুম্মাম।’
এরপর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর সঙ্গে একান্তে কিছু সময় কথা বলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এ কথা জানিয়ে হুম্মাম কাদের বলেন, “এ সময় আমার মা অনেক আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তখন মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বাবা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে একদিন ন্যায়বিচার পাব। কেয়ামতের মাঠে দেখা হবে। দেশের মানুষ অবশ্যই একদিন ন্যায়বিচারের ডাক দেবে’।”
সাকা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার পর হুম্মাম বলেন, ‘বাবা বলেছেন তিনি কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেননি। তিনি বলেছেন, যে কাগজ বের হয়েছে, এ ধরনের কাগজ আরো কত দেখবে সামনে। তিনি আরো বলেছেন, নির্বাচনে হারাতে পারেনি তাই একটু পর তার জান নিয়ে নেওয়া হবে।’
গতকাল শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। প্রথমে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আদেশেও মৃত্যৃদণ্ড বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত।