পৌর মেয়র মনোনয়ন সংসদ নির্বাচনের মতো চায় বিএনপি
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদের মনোনয়ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আদলে চায় বিএনপি। বর্তমান নিয়মে মেয়র পদে মনোনয়নের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তাকে ‘অপকৌশল’ বলে উল্লেখ করে দলটি এ দাবি জানিয়েছে। বিএনপি মনে করে, ‘এ বিধানটি সরকারি কূটকৌশলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’urgentPhoto
আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবির কথা জানান বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন কিছু শর্তের ভিত্তিতে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেবে বলে সিদ্ধান্তের কথা জানায় বিএনপি। এ সময় দলের পক্ষ থেকে পৌর নির্বাচন ১৫ দিন পিছিয়ে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
গত ১৯ নভেম্বর পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনের বিধান রেখে অধ্যাদেশকে আইনে রূপ দিতে ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন, ২০১৫’ বিলটি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এতে শুধু একজন প্রার্থীকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিধান রাখা হয়। কাউন্সিলর প্রার্থীরা আগের নিয়মেই ভোটে লড়বেন।
এ বিধানের বিরোধিতা করে বিএনপির মুখপাত্র লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বিধিমালার (৩) বিধি ১২-এর (ক) উপবিধি ৩-এর দফা (গ)-এর (আ) এর উপদফা (ইইই) অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের ক্ষেত্রে দলের শুধুমাত্র একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে, যা রাজনৈতিক অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।’
‘কারণ দলের একজন মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলে এ পদে সে দলের কোনো বিকল্প প্রার্থী থাকার আর কোনো সুযোগ না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ বিধানটি সরকারি কূটকৌশলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এ বিধানটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের আদলে করা উচিত।’
আসাদুজ্জামান রিপন এদিন নির্বাচন কমিশনেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতি আস্থা রেখে নিকট অতীতের সকল স্থানীয় নির্বাচনে নানা প্রতিকূলতা ও বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু জনগণ মনে করে একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও সুরক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালনে ন্যূনতম স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি।’
বিএনপি মনে করে, এ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড জরুরি।
নির্বাচন পেছানোর দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘দেশের প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটার আগামী ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। অথচ তার মাত্র তিনদিন আগে (৩০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনের জন্য তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার ফলে নতুন প্রজন্মের প্রায় ৫০ লাখ ভোটার জীবনে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
এ অবস্থায় ৫০ লক্ষাধিক ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বার্থে নির্বাচনের তারিখ আরো অন্তত ১৫ দিন পিছিয়ে দেওয়া অত্যাবশ্যক বলে মনে করে বিএনপি।
এসবের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আরো কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘সরকার যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। আমরা মনে করি, বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী অংশগ্রহণ থেকে দূরে রাখা এবং দলীয় প্রচারকর্মী ও নির্বাচনী পোলিং এজেন্টদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখাই হচ্ছে এই গণগ্রেপ্তারের উদ্দেশ্য। এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ না করা হলে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তিদান করা না হলে সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই।’