খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণ ঘিরে আদালত এলাকায় কড়া নিরাপত্তা
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণ ঘিরে পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আমিরুল ইসলামের আদালতে তিনি হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করবেন। বিএনপির একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া সকাল ১০টায় রওনা হয়ে দুপুর ১২টার মধ্যে আদালতে এসে হাজির হবেন।
সকাল থেকে দেখা গেছে, ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মূল ফটক, জেলা জজ আদালতের মূল ফটক, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের মূল ফটক ও ঢাকার পিপি অফিসে (রেবতি ম্যানসন) বাড়তি পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ আদালতের বিচারকাজ বেলা ১১টায় শুরু হবে।
গত ১৮ জুন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে বলে রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
মামলাটি বাতিলে বিএনপির চেয়ারপারসনের রিট আবেদন ও এ-সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে তাঁর জামিনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে নিম্ন আদালতকে বলেছেন উচ্চ আদালত।
নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দুটিও বিচারিক আদালতে চলবে বলে চূড়ান্ত রায় দিয়ে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এসব দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে পৃথক রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এসব রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত ও রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। কয়েক বছর ধরে স্থগিত থাকার পর মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল নিষ্পত্তির আবেদন জানায় দুদক।
পরে পৃথক শুনানি শেষে মামলা তিনটি সচলের রায় দেন হাইকোর্ট। অবশ্য এসব মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।
পরে ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।
অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়।