মন্ত্রী, এমপিদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান নির্বাচন কমিশনের
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছেন, ‘মন্ত্রী-এমপিরা বিজ্ঞ লোক, তাঁরা আইন প্রণয়ন করেন। কাজেই আশা করি তাঁরা এ নির্বাচনে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় করবেন না। তাই সবাইকে অনুরোধ করব আপনারা কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে বিব্রত হবেন, আমাদেরও ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’
আজ সোমবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এ কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
শাহনেওয়াজ আরো বলেন, ‘আচরণবিধি ভঙ্গকারী যেই হোক না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তবে আমাদের কাছে এখনো এমপি-মন্ত্রীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন এমন কোনো অভিযোগ আসেনি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কাউকে প্রার্থী হতে বাধা দেওয়া হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখব এবং তার সত্যতা পেলে অবশ্যই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
বিএনপির একজন প্রার্থীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে, এ অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমরা এখনো এ রকম কোনো অভিযোগ পাইনি। আপনারা হয়তো পেয়েছেন। গণমাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে যাচাই করার জন্য পর্যবেক্ষণ টিম করেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে প্রতীক বরাদ্দের পর আজ সোমবার থেকেই শুরু হয়ে গেছে আনুষ্ঠানিক প্রচার। ১০ ধরনের বিধি-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে আচরণবিধি সংক্রান্ত এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
নির্বাচনী বিধি-নিষেধ
কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো ধরনের মিছিল বা মশাল মিছিল বা যানবাহনে মিছিল করে প্রচার করতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারের অন্তত ১০ ধরনের বিধি-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে কমিশনের উপসচিব মো. সামসুল আলম বিধি-নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো পাঠিয়ে দিয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচারসহ নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বলা হয়, প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি একটি ওয়ার্ডে পথসভার জন্য একটি এবং নির্বাচনী প্রচারণার জন্য একটি মোট দুইটি মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রচারের কাজ দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
প্রার্থীর পোস্টার হতে হবে সাদা-কালো। পোস্টারের আয়তন হবে দৈর্ঘ্যে ৬০ সেমি এবং প্রস্থে ৪৫ সেমি। এতে ছাপানো ছবি পোট্রেট হতে হবে এবং কোনো অনুষ্ঠান বা মিছিলে নেতৃত্ব দান, প্রার্থনারত অবস্থা ইত্যাদি ভঙিমার ছবি ছাপানো যাবে না। নির্বাচনী প্রতীকের আকার কোনোভাবেই তিন মিটারের বেশি হবে না। প্রার্থী বা অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও তারিখবিহীন কোনো পোস্টার লাগানো যাবে না। পোস্টার কেবল নির্বাচনী এলাকায় ঝোলানো যাবে। কোনো স্থাপনার দেয়াল বা যানবাহনে পোস্টার বা হ্যান্ডবিল বা লিফলেট লাগানো যাবে না।
প্রার্থী পোস্টারে তাঁর ছবি ছাড়া কেবল দলীয় প্রধানের ছবি ছাপাতে পারবেন। দলীয় প্রধানের ছবি প্রচারপত্রেও ছাপানো যাবে।
নির্বাচনে যেকোনো ধরনের মিছিল বা মহড়া (শোডাউন) নিষিদ্ধ। প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কেউ যেকোনো প্রকারের মিছিল বা মশাল মিছিল বা মহড়া প্রদর্শন করতে পারবেন না। কমিশন অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দির মধ্যে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো যান চালাতে পারবেন না।
পথসভা বা ঘরোয়া সভা ছাড়া কোনো সভা করতে পারবেন না। তবে ঘরোয়া সভা করতে হলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে তা অবহিত করতে হবে। আর পথসভা কোনো স্থানে এমনভাবে করা যাবে না, যাতে জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা হয়। এ ছাড়া অন্য প্রার্থী কোনো পথসভা বা ঘরোয়া সভায় বাধা দিতে পারবেন না।
নির্বাচনে কোনো ধরনের স্থায়ী বা অস্থায়ী বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। অথবা অন্য কোনো কাঠামো বা বৃক্ষ ইত্যাদিতে স্থাপন বা ব্যবহার করা যাবে না।
নির্বাচনী প্রচারকাজে কোনো ধরনের গেট-তোরণ বা ক্যাম্প নির্মাণ কিংবা জনগণের চলাচলের অসুবিধা হয় এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। প্রচারের জন্য ৩৬ বর্গমিটারের বেশি স্থান নিয়ে মঞ্চ নির্মাণ করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে বিদ্যুতের সাহায্যে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করতে পারবেন না প্রার্থীরা। কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা কার্যালয় করা যাবে না।
নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কেউ মসজিদ, মন্দির বা উপাসনালয়ে প্রচার চালাতে পারবেন না।
নির্বাচনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ২৭ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ ছাড়া বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক বা টেম্পো চলাচল ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকরা এসব যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া জরুরি পণ্যবাহী বাহন বা অ্যাম্বুলেন্সও এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরের ১৫ দিন পর্যন্ত কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা যাবে না। আবার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে আগে সভাপতি বা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে থাকলে নির্বাচনপূর্ব সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সভায় সভাপতিত্ব বা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অথবা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো কাজে জড়িত হবেন না।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাত মেয়র পদপ্রার্থী। মেয়র পদে লড়ছেন ৯২১ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৩৩ জন, বিএনপির ২১৯ জন এবং জাতীয় পার্টির ৭৩ জন প্রার্থী আছেন।