অবশেষে সরে গেলেন বিচারপতি নজরুল
বৈরী পরিবেশের কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর মামলার আপিলের শুনানি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন হাইকোর্ট বিভাগের সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তীব্র সমালোচনার মুখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে শুনানিকালে এ মামলার কার্যক্রম পরিচালনা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন সাবেক এই বিচারপতি।
urgentPhoto
প্রত্যাহার প্রসঙ্গে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী আদালতে বলেন, ‘মাই লর্ড, আমি এর আগে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তিনটি মামলা পরিচালনা করেছি, তখন আমার বিপরীতে অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তখন কোনো প্রশ্ন তিনি ওঠাননি; বরং এ মামলার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে বৈরী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। আমি সংবিধান মেনে এবং নৈতিক অবস্থান ঠিক রেখে এ মামলা পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বৈরী পরিবেশ তৈরি করায় নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম।’
এ বিষয়ে মীর কাসেম আলীর প্যানেল আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বৈরী পরিবেশ তৈরি হওয়ায় বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী মীর কাসেম আলীর আইনজীবী থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে এ বিষয়ে মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেমের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বারের কনফারেন্স রুমে জরুরিভাবে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে নাম প্রত্যাহারের বিষয়ে সোমবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছিলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) সবকিছু জানতে পারবেন। আজকে এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না।’
তবে বৈঠক শেষে মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী কোনো আইনজীবী মামলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করতে হলে তাঁকে আদালতে সেটি উপস্থাপন করতে হয়। এর পর তিনি ঘোষণা দিতে পারেন। আগামীকাল (সোমবার) মীর কাসেম আলীর মামলার শুনানি রয়েছে। তিনি নাম প্রত্যাহার করবেন কি না, তা আগামীকাল আদালতে উপস্থাপন করবেন। তবে একজন আইনজীবী যদি কোনো আসামির উকিল হিসেবে আদালতে দাঁড়ান, তাহলে তিনি ওই আসামির পক্ষের বা ভক্ত হয়ে যান না; বরং আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতকে সহায়তা করাই আইনজীবীর কাজ।’
মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অবসরে যাওয়ার পর এর আগে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আরো তিনটি ব্যক্তিগত মামলা পরিচালনা করেছেন। মামলাগুলো হলো—CPLA NO.1516 OF 2013, CPLA NO. 1230/ 1231 OF 2014। এসব মামলায় বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপরীত পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে আ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আইনজীবী ছিলেন। তখন কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো প্রশ্ন তোলেননি। এখন মীর কাসেম আলীর মামলার সময় তাঁর সমালোচনা করা হচ্ছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানির জন্য দাঁড়ান সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি অবসর-পরবর্তী ছুটিতে (পিআরএল) রয়েছেন।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি সরকারি জাজেস কমপ্লেক্স, সরকারি গাড়ি ও গানম্যানসহ সব সুবিধা পাচ্ছেন। এ রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করবেন, তা চরম নীতিনৈতিকতা বিরোধী।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, ‘আইনজীবীরা সরকারি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেন না। এটা সাধারণ পাবলিকের (মানুষের) কাজ। জাজ হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না।’