মীর কাসেমের মামলা থেকে সরছেন সাবেক বিচারপতি!
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর পক্ষে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী মামলা পরিচালনা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন।
আজ রোববার দুপুরে এ বিষয়ে মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেমের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বারের কনফারেন্স কক্ষে বৈঠক করেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
বৈঠক শেষে নাম প্রত্যাহারের বিষয়ে আগামীকাল সোমবার এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আগামী কাল সবকিছু জানতে পারবেন। আজকে এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না।’
মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট রুলস অনুযায়ী কোনো আইনজীবী মামলা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করতে হলে তাঁকে আদালতে সেটি উপস্থাপন করতে হয়। এরপর তিনি ঘোষণা দিতে পারেন। আগামীকাল মীর কাসেম আলীর মামলার শুনানি আছে। তিনি নাম প্রত্যাহার করবেন কি না, তা আগামীকাল আদালতে উপস্থাপন করবেন। তবে একজন আইনজীবী যদি কোনো আসামির আইনজীবী হিসেবে আদালতে দাঁড়ান তবে তিনি ওই আসামির পক্ষের বা ভক্ত হয়ে যান না। বরং আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতকে সহায়তা করাই আইনজীবীর কাজ।’
মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অবসরে যাওয়ার পর এর আগে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে আরো পাঁচটি ব্যক্তিগত মামলা পরিচালনা করেছেন । মামলাগুলো হলো CPLA NO.1516 OF 2013, CPLA NO. 1230/ 1231 OF 2014। এসব মামলায় বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর বিপরীত পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আইনজীবী ছিলেন। তখন কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো প্রশ্ন তোলেননি। এখন মীর কাসেম আলীর মামলার সময় তাঁর সমালোচনা করা হচ্ছে। মীর কাসেম আলীর মামলা পরিচালনায় বিচারপতি নজরুল ইসলাম থাকবেন কি না, তা আগামীকাল আাদালতে জানা যাবে।’
গত ১০ ফেব্রুয়ারি মীর কাসেম আলীর শুনানির জন্য বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী দাঁড়ালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। তিনি সরকারি জাজেস কমপ্লেক্স, সরকারি গাড়ি এবং গানম্যানসহ সব সুবিধা পাচ্ছেন। এ রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করবেন তা চরম নীতি-নৈতিকতাবিরোধী।’
মাহবুবে আলম আরো বলেন, ‘আইনজীবীরা সরকারি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেন না। এটা সাধারণ পাবলিকের (মানুষের) কাজ। জাজ হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না।’ এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তাহলে কি তিনি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বিষয়টি এমন না। এখানে নীতি- নৈতিকতার প্রশ্ন।’ আইনে কোনো বাধা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইন ও নৈতিকতা দুটি আলাদা বিষয়।’
এর আগে সকালে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়া অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান বিচারপতিদের আদালতের নিয়মকানুন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানি দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হয়। তখন মীর কাসেম আলীর পক্ষে শুনানির জন্য দাঁড়ান সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে অবসরে যাওয়া বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি অবসরপূর্ব ছুটিতে (পিআরএল) রয়েছেন।
গত ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বিচারপতিদের বাসভবনে থাকেন।
সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের ২ এর (১) এ ব্যাপারে বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক পদে বহাল থাকলে উক্ত পদ হইতে অবসর গ্রহণের পর তিনি আপিল বিভাগে ওকালতি বা কার্য করিতে পারিবেন।’