শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ
রাজধানীর শাহজাহানপুরে পাইপের ভেতরে পড়ে নিহত শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে সংক্ষিপ্ত রায়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ কত টাকা দেওয়া হবে এবং কারা এ ক্ষতিপূরণ দেবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জারি করা এক রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল কবীর জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর এসব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। অবশ্য গত বছর এ বিষয়ে জারি করা রুলে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে বিবাদী করা হয়েছিল।
রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আবদুল হালিম।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে বোঝা গেল যে জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারি কর্তৃপক্ষই দায়ী। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কারা দায়ী থাকবেন বা কী ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেবেন আদালত। ১৯৮৩ সালে ভারতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চালু হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ৪৫ বছরের মধ্যে এটাই প্রথম।
এ সময় জিহাদের বাবা-মা আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পরে জিহাদের বাবা বলেন, ‘আদালতের রায় আমরা মানতে বাধ্য। সরকার ও পুলিশের কাছে আমার আবেদন, কেউ যেন আমাকে হুমকি-ধমকি না দেয়। কারণ, আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অপরিচিত মানুষরা আমাকে বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য।’
এর আগে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রুলে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা তার পরিবারকে দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। সে সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম বিষয়েও রুলে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় হাইকোর্ট বলেছিলেন, শিশু জিহাদের মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, রেলওয়ে ও সিটি করপোরেশনের অবহেলাকে কেন দায়ী করা হবে না এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সারা দেশে কতগুলো অরক্ষিত পাইপ, ঢাকনাবিহীন পাইপের গর্ত, ম্যানহোল ও পয়োনিষ্কাশন পাইপ রয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না? একই সঙ্গে জারি করা রুলে গত দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি কিনেছে এবং প্রশিক্ষণ করেছে, তার তথ্য আদালতে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাসার কাছে শাহজাহানপুর রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর ২৮ ডিসেম্বর জিহাদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল হালিম হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন। একই দিন জিহাদকে জীবিত উদ্ধারে সরকারি সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা তদন্তে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে অন্য একটি রিট আবেদন দায়ের করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাইনুল হক।
রিট আবেদনে তদন্ত কমিটিতে জিহাদের মরদেহ উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবীদের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হয়। আর এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে জিহাদকে উদ্ধারে গাফিলতিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ ছাড়া জিহাদকে উদ্ধারকারী পাঁচ যুবককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিতেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সেই সঙ্গে আগের দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কী কী আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনেছে, তার একটি তালিকাও আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়।